নোবিপ্রবিতে ৬ হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১১ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ৭ হাজারের মধ্যে ৬ হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বাহিরে থাকতে হচ্ছে। আর এ সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ছাত্রাবাস। এসব ছাত্রাবাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ফায়দা লুটছে এর মালিকরা।
আবাসন সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মাইজদী শহরে ছাত্রাবাসগুলোতে থাকছে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। আর এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। শুধু তাই নয়, এ সব ছাত্রাবাসগুলোতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এ সব ছাত্রাবাসে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ছাত্রাবাসগুলোতে আবাসিক হলগুলোর মতো নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার ফলে প্রায়ই মোবাইল,কম্পিউটার, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাত্র ৫টি হল। গত ৩১ আগষ্ট ও ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একমাত্র ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল এবং আব্দুল মালেক উকিল হলে আগে মেয়েরা থাকায় সেটি এখন সংস্কারাধীন। সংস্কারের পরে ছাত্রদের তোলা হবে। আর বাকি তিনটি হল ছাত্রীদের জন্য। যার মধ্যে দুটিতে বর্তমানে ছাত্রীরা থাকেন এবং একটি নির্মাণাধীন। আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীদের এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে মেসে।
এদিকে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের সাত মাস পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত আব্দুল মালেক উকিল হল থেকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীদের স্থানান্তরিত করা হয়।
অপরদিকে আবাসিক সংকট নিরসনে আবদুল মালেক উকিল হল ফাঁকা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলটিতে ছাত্রদের তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২৩ অক্টোবর থেকে আবেদন শুরু হয়ে ৭ নভেম্বর আবেদনের সময় শেষ হয়। আবাসিক সিটের জন্য আবেদনকারী ছাত্রদের আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাচ ভিত্তিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।
মাইজদী হাউজিং এলাকায় মেসে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, আবাসিক সংকটের সুযোগ নিয়ে নগরীতে গড়ে ওঠা মেস বা ছাত্রাবাস মালিকরা রমরমা ব্যবসা করছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচাদি মেটাতে বাড়তি খরচ তো হয়ই, এর উপর অনেক শিক্ষার্থীকেই অনিরাপদ পরিবেশে এবং নানা যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকতে হয়। তাই আমাদের দুর্ভোগ লাঘবের চিন্তা করে হলগুলো তাড়াতাড়ি খোলার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সারওয়ার জাহান বলেন, হল বন্ধ থাকায় বাইরের মেস বা বাসাগুলোতে অনেক চাপ। হঠাৎ করে হল বন্ধ করায় সাধারণ ছাত্ররা বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসও নেই। ফলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নিয়ে বাসগুলো যাতায়াত করছে।
এ বিষয়ে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের নতুন প্রভোস্ট ড. মো. আনিসুজ্জামান বলেন, 'হলটির সংস্কার প্রয়োজন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হল মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর দ্রুত কাজ শেষ করে ছাত্রদের হলটি খুলে দেওয়া হবে।
আবদুল মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'হলে সিট পেতে মোট ১৩২৯টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু হলে সিট আছে মাত্র ৪৫০টি। ছাত্রদের ভাইভা নিয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. মুমিনুল হক বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আব্দুস সালাম হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হল সংস্কার ও আবাস যোগ্য করতে হলে অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। তাই একটু সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে আমরা আলোচনা করছি। শীঘ্রই তার সমাধান করা হবে।
এদিকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সঙ্গে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোনও সঠিক সময় জানাতে পারেনি তিনি।
কেআই/আরকে