ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

উইঘুর মুসলিমের ওপর নির্যাতনের দলিল ফাঁস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

শিনজিয়াং প্রদেশের ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমের ওপর চিন সরকারের নির্যাতনের দলিল ফাঁস হয়েছে। ওই দলিল থেকে জানা যায়, চিনা প্রশাসনের নির্দেশেই উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়কে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন কি মোবাইলের একটি শেয়ারিং অ্যাপ দিয়ে ২০১৬ থেকে লাগাতার নজরদারি চালানো হচ্ছে উইঘুরদের উপর।

‘চায়না কেবলস’ নামের সরকারি দলিল ফাঁস হওয়ায় বেইজিং প্রশাসন পড়েছে বিপদে। কেননা সংখ্যালঘু উইঘুরদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ সবসময়েই অস্বীকার করে আসছিল তারা। কিন্তু সম্প্রতি যে ৪০০ পাতার সরকারি দলিল সাংবাদিকদের হাতে এসেছে, তাতে স্পষ্ট উইঘুর-বিরোধী অভিযান সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে। 

ওয়াশিংটনস্থিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে জানিয়েছে, চিনা অ্যাপ ‘জ্যাপিয়া’ ব্যবহার করে শুধু কোরআন ডাউনলোড বা ধর্মীয় বাণী ইত্যাদি শেয়ার করার জন্যও বহু উইঘুরকে আটক করা হয়েছে। এসব দলিলে দেখা গেছে শিবিরে বন্দী উইগারদের জীবনের ওপর কীভাবে নজর রাখা হচ্ছে ও কতোটা নিয়ন্ত্রণের ভেতরে তাদেরকে রাখা হয়েছে।

সাংবাদিকদের ওই সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, ২০১৬-র জুলাই থেকে নানাভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে উইঘুরদের উপরে। যার মধ্যে একটা বড় অস্ত্র ওই ‘জ্যাপিয়া’ শেয়ারিং অ্যাপ। সরকারি দলিল ‘চায়না কেবলস’ থেকে জানা যায়, ওই অ্যাপ দিয়ে কেউ কোনও অডিও, ভিডিও শেয়ার করলেই তাকে চিহ্নিত করে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসন থেকে।

উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়কে আটকে রাখার শিবির যারা পরিচালনা করেন তাদের কাছে ২০১৭ সালে শিনজিয়াং কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি সেক্রেটারি ঝু হাইলুন ফাঁস হওয়া সরকারি দলিলটি পাঠিয়েছিলেন। তাতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই শিবিরগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত জেলখানার মতো চালাতে হবে, বজায় রাখতে হবে কঠোর শৃঙ্খলা এবং কেউ যাতে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের ওই নির্দেশনার মধ্যে আরও যা ছিল:
* কখনোই পালানোর সুযোগ দিও না।
* শৃঙ্খলা এবং শাস্তি বাড়াতে থাকো।
* কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে তাকে কঠোর শাস্তি দাও।
* স্বীকারোক্তি ও অনুতপ্ত হতে উৎসাহিত করো।
* ম্যান্ডারিন ভাষা শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দাও।
* পুরোপুরি বদলে যাওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করো।
* পুরো ভিডিও দেখে নজরদারি চালাও, কোন জায়গা যেন বাদ না থাকে ইত্যাদি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্র সোফি রিচার্ডসন বলছেন, এটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রামাণিক দলিল। এই প্রমাণ এখন থাকা উচিৎ কোন বিচারিক তদন্ত কর্মকর্তার ফাইলে। এসব দলিল এমন একটি প্রমাণ, যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

ফাঁস হওয়া দলিলে যেসব নিষ্ঠুরতার কথা আছে তার সত্যতা মিলেছে বন্দী শিবিরে ছিলেন এমন একজনের বর্ণনাতে। তিনি হলেন ইয়ো জান। তাকে রাতের বেলায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এরপর তাকে এক বছর আটকে রাখা হয় বন্দী শিবিরে।

তিনি বলেছেন, ‘ওরা আমাকে উলঙ্গ করে পায়ে শেকল পরিয়ে দিল। খুবই ভীতিকর অভিজ্ঞতা। ওরা আমাদের মানুষ বলে গণ্য করতো না। সেখান থেকে জীবিত বেরিয়ে আসতে পারবো বলে ভাবিনি কখনও।’

এএইচ/