ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কনস্যুলেটে হামলা পরিকল্পনায় আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি: ইরান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৫১ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

ইরাকের নাজাফ শহরে অবস্থিত ইরানি কন্স্যুলেট ভবনে গতরাতে একদল মুখোশধারী দুষ্কৃতকারী হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। ইরাকে গত প্রায় দুই মাস ধরে চলে আশা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি বর্তমানে সেদেশের জন্য নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। খবর পার্স টুডে’র।

দুষ্কৃতকারীরা এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারী ১২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছে। এসব ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের চাওয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই। এ জন্য আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদিকে দায়ী করছে ইরান।

ইরান বলছে, এ দেশগুলোর পরিকল্পনায় কনস্যুলেটে হামলা করা হয়েছে।  

বলা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে ইরাককে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা মুখ ঢেকে রেখে ইরাকে সহিংসতা ও তাণ্ডব চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ কর্মসূচির আড়ালে একদল চক্রান্তকারী যতটা না সরকার পরিবর্তন, সংস্কার, দুর্নীতি প্রভৃতির বিরুদ্ধে কথা বলছে তার চাইতে তাদের বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরান ও ইরাকের ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উস্কানি দেয়া।

ইরাকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নাজাফে ইরানি কন্স্যুলেট ভবনে হামলার ঘটনা ছাড়াও ইরাকের জনপ্রিয় ধর্মীয় নেতাদের দফতরে হামলা এবং প্রকাশ্যেই ধর্মীয় নেতাদেরকে অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কারা ইরাকের ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিচ্ছে এবং ইরানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। 

এ ছাড়া, দুষ্কৃতকারীদেরকে কারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? কারা গতকাল নাজাফে এবং এক মাস আগে কারবালায় ইরানি কন্স্যুলেটে হামলা চালিয়েছে? ইরাকের জনগণ সেদেশে সৌদি আরব ও মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরোধী হলেও কেন ওই দেশগুলোর কূটনীতিকরা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়নি সেসব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এসব প্রশ্নের উত্তরে দুটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা যায়। প্রথমত, কারা ইরানের কন্স্যুলেট ভবনে হামলার উস্কানি দিয়েছে সেটা দেখার বিষয়। ইরাকের সূত্রগুলো বলছে,  ইরানের কন্স্যুলেট ভবন ও ইরাকের ধর্মীয় নেতাদের দফতরে হামলার সঙ্গে দেশটির বর্তমান সংসদ সদস্য এবং নাজাফের সাবেক গভর্নর আদনান আল জারফির অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আহমদ শারবের হাত রয়েছে। নাজাফের সাবেক ওই গভর্নর আদনান আল জারফির সঙ্গে সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং তার পরিবারের সদস্যরাও আমেরিকায় বসবাস করছে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ইরাক ও ইরানের অনেক ব্যক্তিত্ব স্পষ্ট বলেছেন, ইরাকে গোলযোগের সুযোগে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরবের কারসাজিতে ও তাদের পরিচালনায় ইরানি কন্স্যুলেট ও ধর্মীয় নেতাদের দফতরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পর্দার আড়ালে পরিকল্পনাকারীদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে ইরান ও ইরাকের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

ইরাকের সাইরি দলের প্রধান হামাম মাহমুদি বলেছেন, আয়াতুল্লা সিস্তানির জন্য আমরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করব এবং ইরাককে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছি। অন্যদিকে ইরাকে ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ মাসজেদি ইমাম হোসেন (আ.) এর চল্লিশা পালনে ইরান ও ইরাকের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা ও নিরাপত্তা থেকে বোঝা যায় এ দুদেশের জনগণের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই। 

তিনি বলেন, আজকে যারা ইরাকে সহিংসতা চালাচ্ছে তারা বিদেশিদের উস্কানিতে মূলত ইরাক-ইরান সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

মোটকথা, ইরাকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে তার পেছনে বাইরের ইন্ধন রয়েছে। এ অবস্থায় ইরাকের সরকার, জনগণ ও বিভিন্ন দল ও সংগঠনকে আরো সচেতন হওয়া জরুরি বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। 

এমএস/এসি