ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ইত্যাদির সেই মার্কিন চিকিৎসক দম্পতি ভাইরাল!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৮:৪৫ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার

ডাক্তার জেসন ও মেরিন্ডি দম্পতি

ডাক্তার জেসন ও মেরিন্ডি দম্পতি

'ডাক্তার ভাই'। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কালিয়াকুড়ি গ্রামবাসীর কাছে এই নামেই পরিচিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ডাক্তার এড্রিক বেকার। টানা ৩২ বছর তিনি ওই এলাকার দরিদ্র রোগিদের সেবা দিয়ে ২০১৫ সালে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। গরীব-অসহায়দের প্রিয় ডাক্তার ভাইয়ের বিদায় হাসপাতালটির কার্যক্রমেও বড় প্রভাব ফেলে। প্রয়োজন ছিল ডাক্তার ভাইয়ের মতো একজন পরিচালকের। 

মৃত্যুর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ডাক্তার ভাই এড্রিক বেকার নিজেই এমন একটি আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশি ডাক্তারদের উদ্দেশ্য। কিন্তু তার মৃত্যুর পরও সে আহ্বানে সাড়া দেননি কোন বাংলাদেশি ডাক্তার। যা বাংলাদেশের জন্য রীতিমত লজ্জার! 

তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, দেশের কেউ সাড়া না দিলেও এড্রিক বেকারের সে  আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে ছুটে এসেছেন আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার জেসন। 

যে স্বপ্নের দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল, এমনকি বাংলাদেশিরাও, সেই আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন পেছনে ফেলে বাংলাদেশে এসেছেন ডাক্তার জেসন। তিনি একাই নন, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার স্ত্রী মেরিন্ডিসহ ছোট ছোট তিন সন্তানকেও। গ্রামের ধুলামাটির সঙ্গে পেতেছেন সুখের সংসার। শুধু গরিব-অসহায়, বঞ্চিত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেবেন বলেই।

সন্তানসহ আমেরিকান এই ডাক্তার দম্পতি এখন বসবাস করেন মাটির ঘরে। গ্রাম্য পরিবেশে ডা. জেসন ঘুরে বেড়ান এবং কাজ করেন ফতুয়া আর লুঙ্গি পরেই। আর তার স্ত্রী মেরিন্ডি পরছেন শাড়ি ও মেক্সি। দুজনই বাংলা শিখেছেন। তাদের ছেলেমেয়েরাও শিখছে বাংলা। এমনকি সন্তানদের ভর্তি করেছেন গ্রামেরই স্কুলে। গ্রামের শিশুদের সাথেই খেলে বেড়ায় তারা।

গত ২৯ নভেম্বর বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দরিদ্র মানুষের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরে এখন প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান এই দম্পত্তি।

যেখানে ডা. জেসন জানান, ডাক্তার ভাই (এড্রিক বেকার) জীবিত থাকাকালীন কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি একবার পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। পরে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে জেসন অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারেননি তিনি।

ডক্তার ভাই এড্রিক বেকার 
অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে মধুপুরে চলে আসেন জেসন। এখানে এসে জেসন হয়ে ওঠেন নতুন ডাক্তার ভাই আর মেরিন্ডি হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় ডাক্তার বিবি।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলের জন্য তৈরি করেন মেরিন্ডি। তারপর নিজেরা নাস্তা করে হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন এই দম্পত্তি। 

ছোটছোট ছেলেমেয়ের জন্য এখানকার খাবার-দাবারে বা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে কোনও সমস্যা হয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মেরিন্ডি প্রথমে একটু মজা করেই বলেন, বাচ্চারা ঝালটা (মরিচ) একটু কমই খায়। ঝাল জাতীয় খাবার তারা একটু কমই পছন্দ করে। এছাড়া ভাত, ডাল, মাছ এসব সাধারণ খাবারই থাকে তাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায়। এগুলোই মূলত তাদের বেশি ভালোলাগে।

বাচ্চাদের লালন-পালনে কোন সমস্যা বা অসুবিধায় পড়তে হয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার মেরিন্ডি বলেন, বাচ্চাদের অনেক ছোট বন্ধু আছে, তারা এখানে এসে ওদের সঙ্গে খেলা করে, মজা করে। আর এখানে আমাদের একটি চমৎকার বাড়ি (মাটির ঘর) আছে, যেখানে আমরা বেশ আনন্দের সঙ্গেই বসবাস করছি। 

তবে ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশি ডাক্তারদের গ্রামে গিয়ে দরিদ্র মানুষের সেবার আহ্বান জানিয়েছেন জেসন-মেরিন্ডি দম্পত্তি। তারা মনে করেন, দরিদ্র এসব মানুষের জন্য আরও ভালো চিকিৎসা দরকার।

এদিকে, তাদের নিয়ে করা ইত্যাদির প্রতিবেদনটি রীতিমত ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। অনেকেই জেসন-মেরিন্ডি দম্পত্তির প্রশংসা করছেন। সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে দরিদ্র মানুষের সেবা করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা, তা নজিরবিহীন বলেও দাবি করছেন সবাই। 

পাশাপাশি নিজ দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা দিতে কেউ আগ্রহী না হওয়ার বেদনাও পোড়াচ্ছে সবাইকে, দিচ্ছে লজ্জাও। যে লজ্জা এখন গোটা জাতির বলেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে এ লজ্জা থেকে জাতিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন বলেও উল্লেখ করেছেন মেডিকেলে পড়ূয়া কেউ কেউ। 

দেখুন সেই ভিডিও:

এনএস/