ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

ভিসি মোয়াজ্জম ও আমাদের ভিসি’রা

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৭:২৮ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৭:৩৩ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

আজকাল পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়, কোনো-না-কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন। এহেন অবস্থায় মনে পড়ে যায় হারানো দিনের একজন ভিসির কথা।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন। যিনি ১৯৪৮-৪৯ সালে একবার বিলেত যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাপক সংগ্রহ করতে। তিনি তখন ঢাবির ভাইস চ্যান্সেলর। দেশ বিভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ হিন্দু অধ্যাপক চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থা সংকটজনক। ভিসি হিসেবে সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেনের এটা বড় কন্ট্রিবিউশন যে, তিনি নানা জায়গা থেকে অধ্যাপক সংগ্রহ করে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তখন টিকিয়ে রেখেছিলেন। (সূত্র- 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ' নামক বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠা।) 

ড. সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন একজন বাংলাদেশী একাডেমিক এবং ইসলামী পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ উপ-উপাচার্য হিসেবে (১৯৪৮-৫৩) দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রথম এবং ভাষা আন্দোলনের সময়কার উপাচার্য।

সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন টাঙ্গাইল জেলাধীন মির্জাপুর থানার বানিয়ারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত সৈয়দ পরিবারে ১৯০১ সালের ১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে আরবিতে এমএ পাশ করেন (১৯২৪) এবং ক্লাসিক্যাল এরাবিক পোয়েট্রির ওপর থিসিস লিখে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে ড. সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন ১৯৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে রিডার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৪৮-১৯৫৩ মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৫৩-১৯৫৬), করাচি ইনকোয়ারী কমিটি সদস্য (১৯৫৬-১৯৫৭), চেয়ারম্যান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি কমিশন (১৯৬৪-১৯৬৫) ছিলেন। 

ডঃ সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন দেশ ও বিদেশের বহু পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণ প্রবন্ধ এবং বহু বই প্রকাশ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: Early Arabic Odes, ঢাকা, কিতাব-আল-রুমুয, দামেস্ক, The Poems of Suragalb-Mirdan al-Driqi এবং কিতাব-উল-মারিফাত হাদিস। আরবি ভাষার এই সুমহান পন্ডিত ১৯৯১ সালে মৃত্যবরণ করেন।

কিন্তু এমন একজন পন্ডিতকে, এমন একজন মানুষকে, এমন একজন ভিসিকে, এমন একজন সংগঠককে আমরা কি কেউ মনে রেখেছি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই কি তাকে মনে রেখেছে?

আজকাল যারা ভিসি হন তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই জানতে ইচ্ছে করে, তাদের একজনও কি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেনের সঙ্গে তুলনীয়?

এনএস/