ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

শার্শায় গ্রাহকদের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার

যশোরের শার্শায় বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামে এক এনজিও সংস্থা গ্রাহকদের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে উধাও হয়ে গেছে। ফলে এর সাথে জড়িত নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং গ্রামের খেটে খাওয়া অসহায় গরিব সাধারণ মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে।

অনেক কষ্টের গচ্ছিত টাকা নিবন্ধনহীন এই এনজিওতে রেখে ধোঁকায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে তারা। গ্রামের মানুষ গরু, ছাগল, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সহজ কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার নাম করে নিয়োগ বাণিজ্য এবং গ্রামাঞ্চলে সঞ্চয় সংগ্রহ করে এই টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায় এনজিওটি।

জেসমিন, লাভলু, তরিকুল, লতিফাসহ একাধিক মাঠকর্মী এনজিওটির এমন জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা জানিয়ে বলেন, বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামের ওই এনজিও তাদের ৩৫ জনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে। 

দুই মাসের বেতন বাবদ ৪ লাখ টাকা, সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় বাবদ ৯ লাখ এবং সদস্যদের কাছ থেকে পণ্যের জন্য অগ্রিম ২ লাখ টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দোকান থেকে বাকি পণ্য ক্রয় বাবদ ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনজিও পরিচালনাকারী সদস্যরা। 

এনজিওর এই শাখায় দায়িত্ব পালনকারী ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডমিন শামিম ও হাবিবসহ প্রত্যেকটি সদস্যই তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রেখেছেন। শত চেষ্টা করেও কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে দিন যাপন করছেন গ্রাহকরা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শার্শার কামারবাড়ী মোড় নামক স্থানে গত তিন মাস আগে অফিস নেয় যশোরের চৌগাছা থেকে আসা আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবসহ ৫ জনের একটি চৌকস দল।

বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে পরিশ্রম করে ৩৫ জন চাকরি প্রার্থীকে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমানের টাকা নিয়ে চাকরি দেয় তারা। কয়েকদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামাঞ্চলের অসহায় গরিব পরিবার চিহ্নিত করে সহজ শর্তে ঋণ এবং পণ্য ক্রয়ে সদস্য করে তোলার দায়িত্ব দেন তারা।

সংসারে অভাব অনটন এবং দারিদ্রতা ঘোচাতে মাঠ পর্যায়ে দাঁপিয়ে বেড়ান ৩৫ জন মাঠকর্মী। নভেম্বর মাসের অর্ধেক পার করতে না করতেই বন্যা এনজিওর ঘরে চলে আসে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। 

কয়েক দিন যেতে না যেতেই এই অফিসের ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডমিন শামিম, হাবিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ৩৫ জন গ্রাহকের মাসিক বেতন নিয়ে টালবাহানা এবং যোগাযোগ না করে পিছু হাটতে শুরু করেন। 

এক পর্যায়ে উপর মহলের কোনো কর্মকর্তাই আর অফিসে না এসে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ৩৫ জন কর্মচারী। 

তাদের জামানত স্বরুপ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আনা সঞ্চয়ের টাকার শোকে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। এক দিকে নিজেদের টাকার শোক, অন্যদিকে গ্রামের সহজ সরল মানুষরা তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত চাইছে তাদের কাছে। সব মিলিয়ে এক চরম হতাশায় তারা।

শার্শা শাখায় কর্মরত মোখলেছুর, লাভলু, তরিকুল এবং লতিফা খাতুন বলেন, এ ঘটনায় চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্টের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর, ঝাঁপা এবং শার্শায় একযোগে অফিস খোলে বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্টের একটি জালিয়াতি প্রতারক চক্র। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

এআই/এসি