এইডস আক্রান্তদের অধিকাংশই বিদেশে থাকেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২৪ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার
ত্রিশ বছর বয়সী শানু (ছদ্ম নাম) সন্তান সম্ভবা। এখন সাত মাস চলছে। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায়। উপজেলা সদরেই বাড়ি। কিন্তু গত সপ্তাহে ডাক্তারের চেম্বার থেকে আসার পর থেকেই সে যেন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। কোনভাবেই বুঝতে পারছেন না কীভাবে এ রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধল? অনেক ভেবে বুঝতে পারল অন্য কারও কাছ থেকে নয় এই রোগ তার শরীরে সংক্রমিত হয়েছে তারই স্বামীর কাছ থেকে। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে থাকেন। দুই/তিন বছর পর পর স্বামী দেশে আসেন। তখন তিন থেকে চার মাস থাকেন। এবার এসেছিলেন গত এক বছর আগে।
বিষয়টি মাথার আসার পর আবার ডাক্তারের কাছে গেলেন শানু। ডাক্তারের সাথে খোলামেলা আলোচনা করার পর ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জরুরিভাবে যোগাযোগ করতে বললেন। তিনি পরিচিত এক ডাক্তারের সাথে যোগাযোগও করিয়ে দিলেন শানুকে।
শানু আর দেরী না করে পরদিনই চলে গেলে চমেক হাসপাতালে। পরে নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেন শানু।
শুধু শানু নয়। এমন আরও সতের জন এইচআইভি আক্রান্ত ১৭ জন নারী সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন গত কয়েক মাসে। আর এসব বাচ্চা সুস্থ আছে।
চমেক হাসপাতালে গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ও প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট ডা. শাহানারা চৌধুরী বলেন, ‘জন্মের পর ১৭টি শিশুরই নিয়মিত চেকআপ করা হয়েছে। এখন তারা সবাই সুস্থ আছে। মা হতে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে এ হাসপাতালে প্রিভেনশন অফ মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমটিসিটি) সেবাটি চালু রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৬,৪৪৫ জন গর্ভবতী নারী বিনামূল্যে এ সেবা গ্রহণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করতে হবে। বর্তমানে অনেকে এইচআইভিকে মরণব্যাধি না বলে নিরাময়যোগ্য রোগ হিসেবে উল্লেখ করেন।’
ডা. শাহানারা বলেন, ‘একজন প্রসূতি নারীকে ডেলিভারির পূর্বে ছয়টি পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু এখন এইচআইভিসহ সাতটি পরীক্ষা করানো হচ্ছে। যাতে এইচআইভি সংক্রমণ রোধ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামের রাউজানে এক ব্যক্তির এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। এখনো তিনি দ্বিতীয় ধাপে আছেন। আরও পাঁচটি ধাপ বাকী। এ রোগীর মতো আরও অনেকে বছরের পর বছর চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। চট্টগ্রামের ৯৫ শতাংশ রোগী প্রবাসী। তাদের কারণে এইচআইভি ঝুঁকি বাড়ছে। সিলেটেও একই কারণে এইচআইভি ঝুঁকিতে আছে। তাই প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করতে পারলে এ রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া যৌনকর্মী, মাদকসেবীসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা হক বলেন, ‘অনেক নারীরই গর্ভাবস্থায় এইচআইভি ধরা পড়ে। আর এসব রোগীদের অধিকাংশ স্বামীই বিদেশে থাকেন। দেশে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি প্রবাসী ভাইরা যাতে এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হয় সে বিষয়েও আমাদের জোর দিতে হবে। এছাড়াও এ সব রোগীদের মানসিক দিক বিবেচনা করে তাদের সাথে ডাক্তারদের খুব মনোযোগ দিতে হবে। এবং তাদের সাথে সব বিষয় খোলামেলা আলোচনা করে তাকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলতে হবে। কারণ এসব নারীর সাথে তাদের সন্তানসহ পুরো পরিবার রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
এমএস/এসি