বিস্ময়কর ‘ভাইরাল শিশু’ ৬ বছরের ঋতুরাজ (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৩ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:০৮ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
ভাইরাল শোতে বাপ কা বেটা ঋতুরাজ
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়তই ভাইরাল হচ্ছে বিভিন্ন ভিডিও অথবা ব্যক্তি। ভিডিওগুলো কখনও হয়ে উঠছে প্রতিভা বিকাশের মাধ্যম, কখনওবা হয়ে উঠছে হাস্যরসাত্মক ঘটনা, আবার কখনও শিক্ষণীয় বিষয়। দর্শকের আগ্রহের কারণে ভিডিওটির কারিগর কিংবা ভিডিওর পাত্র-পাত্রী পেয়ে যাচ্ছেন তারকাখ্যাতি।
দেশে বা দেশের বাইরে ভাইরাল হওয়া প্রচারযোগ্য আলোচিত এসব ভিডিও এবং এর মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘ভাইরাল শো’। মিরাক্কেল খ্যাত আনওয়ারুল আলম সজলের উপস্থানায় এবং সোহেল রানা সবুজের প্রযোজনায় প্রতি সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে প্রচার হচ্ছে অনুষ্ঠানটি।
শো'টির সর্বশেষ ০২ ডিসেম্বরের 'বিশেষ এপিসোডে' ছয় বছরের এক শিশুকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তার বাবা শুভাশিস ভৌমিক। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস এসেছিলেন তার শিশু সন্তান ঋতুরাজকে নিয়ে। যে শিশুটি সম্প্রতি তার বাবার সঙ্গে বেশ কয়েকটি গান গেয়ে হয়েছেন ভাইরাল। এসেছেন আলোচনায়।
মজার বিষয় হলো, বাপ-বেটার এই সঙ্গীত চর্চা বা গানের ব্যান্ডের একটি নামও আছে, আর তা হলো ‘বাপ কা বেটা’। বাপ-বেটার এই ব্যান্ডের পেছনের গল্পে বাবা শুভাশিস ভৌমিক জানান, তিনি ছোটবেলাতে গান শিখতাম এবং এক পর্যায়ে গিটার বাজানোও শিখে ফেলেন কলেজ জীবনে। তারপর তার শিশু পুত্র ঋতুরাজের জন্ম হলে তাকে নিয়েও কিছু একটা করার স্বপ্ন পেয়ে বসে তার।
শুভাশিস আরও জানান, ঋতুরাজের বয়স ছয় মাস হলে তাকে তিনি গান শোনাতেন। এভাবে শোনাতে শোনাতেই শিশু সন্তানের মধ্যে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করেন। যা তাকে আরও উৎসাহ যোগায়। এরপর শিশু পুত্রের বয়স চার বছর হলে সে তার (বাবা) সঙ্গে তাল মেলাতে শুরু করে। যা তাকে আরও বেশি উৎসাহ যোগায়।
তিনি বলেন, ঋতুরাজের বয়স যখন পাঁচ বছর হলো- তখন তার মধ্যে গানের রিদম ডেভেলপ করে। আর তখনই তিনি শিশুপুত্রকে নিয়ে গান করা এবং ভিডিও করতে উদ্যোগী হই। পরে তা আমার পারসোনাল প্রোফাইলে আপলোড করি। যা থেকে আমরা বেশ ভালো সাড়া পাই এবং তা আমাকে আরও বেশি উৎসাহী করে তোলে।
এমনকি তাদের বাপ-বেটার এই সুন্দর মুহূর্তগুলো, স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য আর্কাইভ করে রাখারও ব্যবস্থা নেন। আর এটা করার জন্যই শিশু ঋতুরাজের নামেই একটা ফেসবুক পেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেন বাবা শুভাশিস। যাতে ঋতুরাজ একজন আদর্শবান ছেলে ও সত্যিকার একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারে সেই মানসে তিনি এটা করেন। মূলত সেদিন থেকেই এই ‘বাপ কা বেটা’ ব্যান্ডের সৃষ্টি।
এদিকে, বাবা ছাড়া আর কার সঙ্গে গান করতে চায় জানতে চাইলে ছোট্ট শিশু ঋতুরাজ চট করে জানায়, সে তাহসানের সঙ্গে গান গাইতে চায়। কণ্ঠশিল্পী তাহসানকে তার এত পছন্দ কেন- জানতে চাইলে খানিকটা তোতলানো কণ্ঠে ঋতুরাজ জানায়- বিকজ, তাহসানের সব গানই তার ভালো লাগে।
এসময় তাহসানের কোন গানটা বেশি ভালো লাগে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে ঋতুরাজের স্পষ্ট জাবাব- ‘আলো আলো’। অতঃপর গানটির দুই-তিনটা কলি সে গেয়েও শোনায়। যা ছিল এক কথায় অসাধারণ। অসাধারণ তার গায়কি ঢঙ ও শারীরিক ভাষা।
এরপর বাবা শুভাশিস তার নিজের শুরুটা সম্পর্কে জানান, গানে হাতেখড়ি তার মায়ের কাছ থেকেই। তিনি গান শিখতেন এবং ছায়ানটে রবীন্দ্র সঙ্গীত ফিফথ ইয়ার কমপ্লিট করেছিলেন। ছয় বছর-সাত বছর বয়সেই গানে হাতে খড়ি হয় তার মায়ের কাছেই। পরে তিনিও ছায়ানটে নজরুল সঙ্গীতে সেকেন্ড ইয়ার কমপ্লিট করেন। তারপর আসলে পড়াশুনা আর ক্যারিয়ারের চাপে প্রফেশনালি আর আগাতে পারিনি।
কিন্তু মাঝে মাঝে কলেজ লাইফে গিটার নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে গাইতেন এবং পরবর্তীতে কর্পোরেট লাইফে কিছু কিছু প্রোগ্রামও করতেন বলে জানান শুভাশিস। তবে কাজের চাপে গানকে নিজে নিয়মিত করতে না পারলেও সন্তানের ক্ষেত্রে তেমনটা হোক তা তিনি চান না বলেও জানান।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানে পড়ুয়া ঋতুরাজ বড় হয়ে একজন আর্মি অফিসার হতে চায় বলে জানায়। তখন বাবা হিসেবে পুত্রের উপর কোন চাপ প্রয়োগ করবেন না উল্লেখ করে শুভাশিস জানান, ও পড়াশুনার পাশাপাশি যা ইচ্ছে তাই হবে, আমি বা আমার পরিবার এক্ষেত্রে খুবই উদার। এমনকি আমি তার পড়াশুনা নিয়েও কোন চাপ দেই না। ছোট্ট ঋতুরাজ অবশ্য পড়াশুনাতে বেশ ভালো বলেও সন্তোষ প্রকাশ করেন বাবা শুভাশিস।
অন্যদিকে, গানের ক্ষেত্রে বাপ-বেটা মিলে গেয়েছেন বেশ কিছু গান। যার মধ্যে স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহকে উৎসর্গ করে গাওয়া ‘ও আমার বন্ধু গো’ গানটি অন্যতম। এছাড়া প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো’ গানটিও বেশ সাড়া মেলে। আর নগর বাউল জেমসের বাংলাদেশ গানটি তো রীতিমত ভাইরাল হয় ইউটিউবে।
মজার বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশ গানটির কঠিনসাধ্য লিরিকগুলো ছোট্ট শিশু যে মুখস্থ করতে পেরেছে এটাই রীতিমত অবাক করে দেয় সবাইকে।
পরিশেষে, বাবা হিসেবে নিজের ছোট্ট শিশুকে তিনি কিভাবে সময় দেন, কিভাবে প্রমোট করেন এবং প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে তার বাবা-মায়েদের কেমন আচরণ, ব্যবহার ও সার্বিক কার্যকলাপ কেমন হওয়া উচিৎ- সে সম্পর্কে ইঞ্জিনিয়ার বাবা শুভাশিস কি বলেছেন, তা নিচের ভিডিওতি দেখে ও শুনে নিন নিজের মতো করে।
দেখুন সেই ভিডিওটি-
এনএস/