ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

পোশাক রফতানিতে ডলারে ৫টাকা ভর্তুকি চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশিত : ১০:২৫ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৬ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের ধসের ইঙ্গিত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এ ধস ঠেকাতে কারেন্সি রিয়ালাইজেশন প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। 

জানা গেছে, বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কাছে তৈরি পোশাক খাতের রফতানিতে বড় ধস ঠেকাতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কারেন্সি রিয়ালাইজেশন প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এতে পোশাক রফতানিকারকদের প্রতি ডলারে ৫ টাকা অতিরিক্ত বিনিয়ম হার দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

এই কর্মসূচী চালাতে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারের রাজস্ব আদায় যেভাবে কমে যাচ্ছে অর্থ বছরের মাঝে বাজেট থেকে এ অর্থ যোগান দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় ।

অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে আশংকা করা হয়, এ ধস বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিকে বেকাদায় ফেলে দিতে পারে। কারণ দেশের ৪০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ দেশের তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে আর্থিকভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। 

টিপু মুনশির চিঠিতে আরও বলা বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশঙ্কা করছে চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানির এই মন্থর ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। মূলতঃ মূল্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারছে না বলেই এরুপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিযোগী সক্ষমতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের বিপরীতে দেশের মুদ্রা টাকার শক্তিশালী অবস্থান। যেখানে বিগত ৭ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রয়েছে। সেখানে একই সময়ে ভারতীয় রুপি ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, চীনের ইউয়ান ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ, ভিয়েতনামের ডং ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং তুরস্কের লিরার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২২২ শতাংশ।

ভারত দেশের রফতানিকারকদের জন্য একটা নতুন প্রনোদনা প্রাকেজ ঘোষণা করেছে। এ জন্য বাজেটে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান সরকার তাদের পোশাক খাতের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স রেয়াত ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছে বলে জানা যায়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের অধিকতর রফতানি ক্রয়াদেশ পাচ্ছে, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এই সুবিধা নিতে পারছে না। ফলে, তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমার পিছিয়ে যাচ্ছি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বিরুপ পরিস্থিতিতে দেশের সিংগভাগ রফতানি আয় অর্জনকারী পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং এই খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুরক্ষার জন্য কিছু আশু পদক্ষেপ গ্রহণ একান্তভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। 

বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের সুরক্ষা প্রদানের জন্য ‘আরএমজি ফরেন কারেন্সী রিয়ালাইজেশন প্রোগ্রাম (আরএফসি আরপি)’ প্রবর্তন ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে চিঠিতে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি জরুরি বিধায় চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

চলতি অর্থ বছরে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকের জন্য নতুন করে ১ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয় হয় বাজেটে। শুধু তৈরি পোশাক খাতের নগদ প্রণোদনা বাবদই সরকারের ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এবার ১০ বিলিয়ন ডলার বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতেই হয়েছে ১১.৪৯ শতাংশ।