রীতিমত ছেলেখেলা করল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশিত : ১০:৪২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৪:২৯ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
এসএ গেমস-২০১৯ শুরু হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর থেকে। তবে এর অন্যতম জনপ্রিয় ইভেন্ট ক্রিকেট শুরু হয় দুদিন পর। যেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা দুটি ম্যাচ খেলে জয় তুলে নিয়েছে দুটিতেই। আর ছেলেরাও জয় পেয়েছে তাদের প্রথম খেলায়। তবে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচে যা হয়েছে, তা প্রতিপক্ষকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলাই বলা যায়।
ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া ওই চার ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষকে নিয়ে ছেলেখেলা করা দল চারটি হলো- বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পুরুষ ও নারী দল। এদের প্রতিপক্ষরা ছিল- মালদ্বীপের পুরুষ ও নারী দল এবং ভুটানের পুরুষ ও নেপালের নারী দল।
এদিন পুরুষ বিভাগের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের মুখোমুখি হয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল মালদ্বীপ। যে ম্যাচে অনেকটা সহজ জয়ই তুলে নেয় শান্ত-সৌম্যরা। প্রতিপক্ষকে মাত্র ৬৫ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে পায় ১০৯ রানের বিশাল জয়।
কীর্তিপুরের ত্রিভূবন বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শান্ত-সৌম্য-নাঈমের ব্যাটে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৯ রান আসে অধিনায়ক নাজমুল হোসাইন শান্তর ব্যাট থেকে।
৩৮ বল থেকে তিন ছয় আর এক চার হাঁকালেও মাত্র ১ রানের জন্য ফিফটি বঞ্চিত হন শান্ত। এছাড়া ফিফটি বঞ্চিত হন ওপেনার সৌম্য সরকারও। ৩৩ বল খেলে দুটি ছক্কা আর চারটি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন সৌম্য। ২৮ বলে চারটি চার ও এক ছয়ে ৩৮ রান করা মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটিও ছিল চমৎকার। যার ওপর ভিত্তি করে ওই স্কোর গড়ে টাইগাররা।
জবাবে দিতে নেমে টাইগার পেসারদের সামলাতে পারলেও স্পিনারদের কবলে পড়ে মাত্র ৬৫ রানেই গুটিয়ে যায় মালদ্বীপ। দলটিকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়ে পাঁচ উইকেট ঝুলিতে পোরেন বাঁহাতি অর্থডক্স স্পিনার তানভীর ইসলাম, ১৯ রানের বিনিময়ে। তাইতো ম্যাচ সেরাও হন বরিশালের এই তরুণ।
এছাড়া ওপর দুই স্পিনার মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি ও আফিফ হোসাইন নেন দুটি করে উইকেট। বাকি উইকেটটা অবশ্য যায় সৌম্যের পকেটে। যাতে করে দুর্বল দলটির দুই ওপেনার (১০ ও ১২) ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি আর কেউই। যার ফলে ১০৯ রানের বড় জয় নিয়েই এসএ গেমসে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশের ছেলেরা।
আর মেয়েদের বিভাগের তৃতীয় ম্যাচে এদিন নেপালের বিপক্ষেও বড় জয় তুলে নিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া টাইগ্রেসরা। আগের দিন শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারানো সালমা বাহিনী আজ নেপালকে হারায় ১০ উইকেটের ব্যবধানে।
রাবেয়া খানের ঘূর্ণি আর জাহানারা আলমের পেসেই মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে যায় নেপালের মেয়েরা। যেখানে রাবেয়া মাত্র ৮ রানে নেন ৪টি উইকেট আর জাহানারা দুই রানের বিনিময়ে নেন দুটি। জবাব দিতে নেমে অষ্টম ওভারেই কোনও উইকেট না হারিয়েই খেলা শেষ করেন মুরশিদা খাতুন (২৩) ও আয়েশা রহমান (২৬)।
অন্যদিকে, এদিন সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কার দল দুটি। লঙ্কার ছেলেরা তো ভুটানের বিপক্ষে পেয়েছে শান্ত-সৌম্যদের করা স্কোর সমান জয়। অর্থাৎ ১৭৩ রানের বিশাল জয়। আর দেশটির মেয়েরা তো ছেলেদের থেকেও একধাপ এগিয়ে। পেয়েছে ছেলেরা যে স্কোর গড়েছে তার থেকেও বেশি রানের জয়।
কী, অবাক হয়েছেন তাই না! আমিও প্রথমটায় অবাক হয়েছিলাম। তাহলে আসুন, বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি-
এদিন পুরুষ বিভাগের চতুর্থ ম্যাচে ভুটানকে পেয়ে রীতিমত ছেলে খেলায় মেতে ওঠে শ্রীলঙ্কার তরুণরা। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলটির বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালায় লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। তাতে বিভ্রান্ত হয়ে অতিরিক্ত রানও দেয় তারা। অবশ্য বড় স্কোরটিই আসে লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাট থেকে। ৪৮ বলে আটটি চার ও দুই ছয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে ম্যাচ সেরাও হন তিনিই।
এছাড়া আরেক ওপেনার দলিয় ক্যাপ্টেন আসালাঙ্কা ২৫ ও মেন্ডিস ২৭ করে আউট হলেও আশানের ৬ বলে ১৪ ও বান্দারার ৫ বলে ১৪ রানে ভর করে চার উইকেটে ২৪৮ রানের বড় স্কোর গড়ে দলটি। যার জবাব দিতে নেমে লঙ্কান নয় বোলারের সামনে আট বল বাকি থাকতেই মাত্র ৭৫ রানে অলআউট হয় ভুটান। ফলে ১৭৩ রানের (বাংলাদেশের স্কোর-১৭৪) জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগারদের অন্যতম এই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।
আর, মেয়েদের চতুর্থ ম্যাচে পোখারার রঙ্গশালায় মালদ্বীপকে সামনে পেয়ে তো রীতিমত রঙ্গলীলায় মেতে ওঠে লঙ্কান মেয়েরা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫৮ রানে দুই উইকেট হারালেও দলিয় অধিনায়ক হারশিথা মাদভির টর্ণেডো সেঞ্চুরি আর সন্দিপানির ব্যাটে ২৭৯ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে লঙ্কান মেয়েরা। মাত্র ৪৭ বলে ১৫টি চার আর তিনটি ছক্কায় ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাচ সেরা মাদভি।
তবে মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি সন্দিপানি। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ছিল ১১টি চার আর তিনটি ছক্কার মার। অবশ্য দুজনেই ছিলেন অপরাজিত। পরে জবাব দিতে নামা মালদ্বীপের মেয়েদেরকে মাত্র ৩০ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছেলেদের করা স্কোরের চেয়েও বেশি রানের অর্থাৎ ২৪৯ রানের বিশাল জয় তুলে নিয়ে অন্য দলগুলোকে একরকম চ্যালেঞ্জই জানিয়ে রাখলো লঙ্কান মেয়েরা।
এনএস/আরকে