যেমন ছিল এবারের হাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষা
হাবিপ্রবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার
উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির।
শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজের সাথে হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেমর নেতৃত্বেও দ্রুত একাডেমিক, অবকাঠামো থেকে শুরু করে সবদিকেই ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে হাবিপ্রবিতে। এবারের ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ছিল তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
গত ২ হতে ৫ ডিসেম্বর হাবিপ্রবির ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেকে দেয়া হয় নিরাপত্তার চাদরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরায় আওতায় রাখা হয় পুরো ক্যাম্পাসকে।
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে লাল-সবুজ বাতিতে আলোকসজ্জিত করা হয় ক্যাম্পাসের সম্মুখভাগকে, উম্মোচিত করা হয় দৃষ্টি নন্দিত প্রধান গেট, সার্বক্ষণিক চালু রাখা হয় নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক পানির ফোয়ারা।
পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ১০ টাকা ভাড়ায় শহর হতে ক্যাম্পাস পর্যন্ত চালু থাকে বাস সার্ভিস। মেসগুলোতে করা হয় ফ্রি থাকার ব্যবস্থা ও হোটেল গুলোতে প্রতিটি খাবারের দাম জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি নিরাপদে রাখা, সিট প্লান, পরীক্ষার রুম দেখিয়ে দিতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে ছাত্রলীগ, রোভার স্কাউট, সাংবাদিক সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, গ্রীণ ভয়েস, ডিবেটিং সোসাইটি, সেজুতি সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অনুষদীয় অ্যাসোসিয়েশনসমুহ।
‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোট ৪ শিফটে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । প্রথম ২টি শিফটের (ডি-১ ও ডি-২) পরীক্ষা অত্যান্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় (১.৩০ হতে ৩টা) জালিয়াতির অভিযোগে মাহামুদুল হক শাকিল নামের (রোল ৪১৯৩৭৯) এক শিক্ষার্থী ও তাকে সহযোগিতা করার দায়ে আমিনুল ইসলাম নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ।
দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ভাঁজ ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে অফিস সহায়ক আকলিমা খাতুন নামের এক কর্মচারীকে ভর্তি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এছাড়া আর কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ।
তৃতীয় দিন ছিলো ‘বি’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা । এই দিন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে সকল ইউনিটের পরীক্ষা ।
‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়ে শেষ হয় এবারের ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। তিনটি শিফটে এই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এই ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়।
‘সি’ ইউনিটের ৩য় শিফটের (১.৩০ হতে ৩টা) পরীক্ষা চলাকালীন রাকিবুল ইসলাম সুমন নামের একজনকে প্রক্সি দেয়ার অভিযোগে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলাও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিদিনের ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রসমুহ পরিদর্শন করেন হাবিপ্রবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড.মু.আবুল কাসেম ।
উপাচার্য বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি গড়ে ৭০-৭৫% এর মতো ছিলো । ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্রে করে এবার আইন শৃঙ্খলবাহিনীর পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছিল।
এছাড়া খাবার হোটেল ও মেসগুলোতে কনোন অনিয়ম হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ টিম ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাহিরের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলো।
ভর্তি পরীক্ষায় সার্বিকভাবে সহযোগিতার করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, বাস মালিক সমিতি, বিদ্যুত বিভাগ, মেস মালিক সমিতি, হোটেল মালিক সমিতি, ছাত্রলীগ, সাংবাদিকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। এজন্য আমি হাবিপ্রবি পরিবারসহ সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
তিনি আরো বলেন, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এবার একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটিতে আমরা সফল হয়েছি বলে মনে করি । আগামীতে আমরা আরও বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
এবার ভর্তি পরিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য শহর হতে ক্যাম্পাস পর্যন্ত মাত্র ১০ টাকা ভাড়ায় বাস সার্ভিস চালু, ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেসগুলোতে ফ্রিতে থাকার ব্যবস্থাসহ হোটেলে খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্যও ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। পরীক্ষা চলাকালীন অভিভাবকদের বসার জন্য ছিল চেয়ার, ফ্রেশ হওয়ার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ওয়াশরুম এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর প্রফেসর ড.মো .খালেদ হোসেন বলেন, বড় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছি। যারা বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাদের সকলের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এআই/