ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

আজ আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি শুরু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৬ পিএম, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৯:২৩ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা নিয়ে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানি হতে যাচ্ছে আজ। আর এই শুনানিতে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডের হেগে পৌঁছেছেন মিয়ানমারের নেতা এবং শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি। হেগে অবস্থিত বিশ্ব আদালতেই মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এ বিচারের শুনানি।

রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ইস্যুতে চলতি বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে লড়বেন ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত আইনমন্ত্রী আবুবাকর তামবাদাউ।

ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সামনে সু চি ঠিক কী বলবেন, এ নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। তবে সময় যতো গড়াচ্ছে ততোই পরিষ্কার হচ্ছে তার অবস্থান। কারণ আগামী বছর মিয়ানমারে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সু চি তার কৌশল ঠিক করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু চি সেনাদের পক্ষেই ওকালতি করবেন বলেই ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের স্থানীয় মিডিয়া।

এদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি দলের পাশাপাশি সরকার সমর্থকরা বিক্ষোভ করবে।

‘ফ্রি রোহিঙ্গা জোট’ নামের একটি সংগঠন বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ১০টি দেশের ৩০টি সংগঠনকে নিয়ে ‘বয়কট মিয়ানমার অভিযান’ শুরু করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে অংশ নেয়া দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবাকর বলেন, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের খতম করার জন্য সেনাবাহিনী নৃশংসতা শুরু করে। এর ফলে বাধ্য হয়ে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। এদের কাছ থেকে নৃশংসতার যে কাহিনী বিশ্ব শুনেছে তা নিশ্চিত গণহত্যার শামিল।

গাম্বিয়ার এই মন্ত্রীর পরিকল্পনায় রয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য যাতে বিচারকরা কার্যকর পদক্ষেপ নেন। আর এজন্য তিনি আদালতকে প্রমাণ সংরক্ষণ করতে বলবেন।

এর আগে রোববার (৮ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোর বিমানবন্দর থেকে নেদারল্যান্ডের হেগের উদ্দেশে রওনা দেন সু চি। তার আগে শনিবার সু চির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শহরটিতে তার কয়েক হাজার সমর্থক সমাবেশ করে। ইয়াঙ্গুনে দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তার জন্য প্রার্থনা করে। 

রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে 'গণহত্যা' আখ্যা দিয়ে গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। 

মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সমর্থনে গাম্বিয়ার ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাসন ধ্বংস করেছে মিয়ানমার। 

এদিকে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে গণহত্যার আলামত। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। 

সু চি'ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হন। বরং বরাবরই গণহত্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতেও কোনো উদ্যোগ নেননি সু চি। এমনকি দেশটির সেনাবাহিনীর মতো মিয়ানমার নেত্রী সু চি'ও 'রোহিঙ্গা' শব্দটি ব্যবহার করেন না।

এনএস/