অমিত শাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চায় মার্কিন কমিশন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:২৭ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:৪৬ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে দেশে ও বিদেশে সমালোচনার পাহাড় বয়ে গেলেও সোমবার বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস করে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
ঘরে-বাইরের তীব্র সমালোচনার পর এবার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার বিরুদ্ধে এবার নিষেধাজ্ঞা চাইলো আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার যুক্তরাষ্ট্রীয় সংগঠন মার্কিন কমিশন।
শুধু তিনিই নন, ওই বিলে ধর্মীয় বৈষম্যকে মান্য দেওয়ায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তা নিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার তর্ক-বিতর্ক চলার পর, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে মধ্যরাতে সেটি পাস হয়ে যায়। এবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস হওয়ার অপেক্ষা। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও, সেখানেও বিলটি পাস করিয়ে নেওয়া যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী মোদি-অমিতরা।
আর তাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। তাদের মতে, এই বিলে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিলটি পাসের পরপরই সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পেশ করেছেন, তাতে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়ায় ইউএসসিআইআরএফ ভীষণ উদ্বিগ্ন। সংসদের দুই কক্ষে বিলটি যদি পাস হয়ে যায়, তাহলে অমিত শাহসহ সে দেশের অগ্রগণ্য নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত মার্কিন সরকারের।’ নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক মোড়, যা ভুল পথে এগোচ্ছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ইতিহাস এবং সে দেশের সংবিধান, যা কি না ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমানাধিকারের কথা বলে, এই বিল তার পরিপন্থী।’
আসামে নাগরিক পঞ্জি নিয়েও এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ইউএসসিআইআরএফ। ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে সেইসময় দাবি করেছিল তারা। নাগরিক সংশোধনী বিল নিয়েও একই আশঙ্কা প্রকাশ করলো ওই সংগঠন।
তাদের দাবি, ‘আমাদের আশঙ্কা, নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরীক্ষা নিচ্ছে ভারতীয় সরকার, যা কি না কয়েক কোটি মুসলিমের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেবে।’ গত এক দশকে ধর্মীয় বৈষম্য নিয়ে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনকে ভারত সরকার কোনো রকম গুরুত্ব দেয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
এর আগে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তৃতীয় কোনও দেশের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না বলে বার বার জানানো হয়েছিল। এমনকি, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে সমীক্ষা চালাতে ভারতে আসতে চাইলে, ইউএসসিআইআরএফ-এর কর্মকর্তাদের ভিসার আবেদনও নাকচ করে দেয় ভারত সরকার।
এমনিতে তাদের সুপারিশ মানতে বাধ্য নয় কোনও দেশ। তবে মার্কিন সরকারে তাদের প্রতিবেদনের অসীম গুরুত্ব রয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোনো দেশ বা ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় কি না, ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
সূত্র: আনন্দবাজার
এআই/