ইবিতে বিভক্ত আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
আগামী ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ইবিশিস) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দল ও সমন্বয়ের অভাবে দুই গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন বলে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
দলীয় ও শাপলা ফোরামের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি। প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকের দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।
এদিকে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের প্রার্থী প্যানেল নির্ধারণ করে শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটি। গত ৪ ডিসেম্বর ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় প্রাথমিকভাবে প্যানেল নির্ধারণও করেন তারা।
এতে ফোরামের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ পুরো কার্যনির্বাহী কমিটি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে স্ব-স্ব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার খসড়া তৈরি করা হয়।
তবে এই প্যানেল না মেনে শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা ত্যাগ করে। এই পাঁচ শিক্ষক বর্তমানে শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।
পরে প্যানেল চূড়ান্ত করতে গত ৮ ডিসেম্বর (রোববার) সকাল ১১টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সাধারণ সভা করে ফোরামের শিক্ষকরা। এতে খসড়া প্রার্থী তালিকা উত্থাপিত হলে এর প্রতিবাদ করেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনসহ সিনিয়র শিক্ষকরা।
ফলে সভায় উভয় গ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে উচ্চবাচ্য বিনিময় হয়। পরে সভা মূলতবি করে বিকাল ৪টায় পুনরায় শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উভয় গ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে সমঝোতা করতে দেনদরবার হয়। এসময় শিক্ষক সমিতির ১৫ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে শাপলার বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপ এবং সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে শাপলার সাবেক সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের শিক্ষকরা নির্বাচন করার প্রস্তাবনা উঠে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।
তবে এই পদগুলোতে কেবল মাত্র শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন বলে শর্ত জুড়ে দেয় ফোরামের অন্যান্য সদস্যরা। কিন্তু ফোরামের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের শিক্ষকরা এই শর্তে রাজি হননি বলেও সভা সূত্রে জানা যায়।
পরে আবারো ১৫ সদস্যের কমিটিতে সাতজন করে সদস্য দাবি করে তারা। এতে শাপলার বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের শিক্ষকরা রাজি হননি। তারা ৯ জন ও ৬ জন করে সদস্যের প্রস্তাব দেয়। ফলে সমঝোতায় আসতে পারেনি উভয় গ্রুপের শিক্ষকরা। তাই কোন প্রকার সমঝোতা ছাড়াই জরুরি সভা শেষ হয়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে উভয় গ্রুপের শিক্ষকরা প্যানেল নির্ধারণ করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। এখনও তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি কোনো গ্রুপ। তবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে জিততে একটি প্যানেলে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে পুনরায় সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।
ফোরামের সাবেক সভাপতি ও শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এটা দলের ইন্টারনাল বিষয়। শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ আমি জন্ম দিয়েছি। এখন লোক বেড়ে গেছে। গ্রুপিংয়ের বিষয়ে ফোরামের বর্তমান সভাপতি সম্পাদকের কাছে জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’
ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘শাপলা ফোরামের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির কিছু শিক্ষক এক সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রশাসনিক পদে আছেন। অনেকে ৫-৭ বছর ধরেও আছেন। একাই বিভিন্ন কমিটিতে আছেন এমনও শিক্ষক আছে। এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সর্বস্তরের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই অবস্থার তৈরী হয়েছে। কিন্তু এখনও আলোচনার সময় আছে।’
শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রুপিংটা কেনো হচ্ছে এটা আসলে আমারও বোধগম্য নয়। গতবারের নির্বাচনে ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচন করেছিলো। এতে একটি ভাল ফল আসছিলো। আমরা সেই আলোকে এবারো প্রস্তাব রেখেছিলাম। তবে ফোরামের সভাপতি হিসেবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমঝোতায় আসার। একাধিক পদে থাকার অভিযোগগুলো খোড়া যুক্তি। শাপলার পদ আমার আদর্শিক পদ। আর প্রশাসনিক পদ অন্য বিষয়।’
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আসলে এরকম বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমঝোতা করার। বিভিন্ন অভিযোগগুলো কোনো ব্যক্তির হতে পারে, সকল শিক্ষকের নয়।’
এআই/