ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে আসাম ও ত্রিপুরায় সেনা মোতায়েন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘটে উত্তাল হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্য। এসব রাজ্যে সহিংসতা ঠেকানোর লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। খবর আনন্দবাজার প্রত্রিকা’র।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আসামের ডিব্রুগড়ের লাহোওয়ালে সেনা নামানো হয়েছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করবে। শান্তি বজায় রাখতে এ সব এলাকায় সেনারা ফ্ল্যাগ মার্চ (স্বশস্ত্র টহল) করবে।’

উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে উত্তাল জনতাকে নিবৃত্ত করতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছুড়তে হয়েছে বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ এলাকায় আতঙ্কিত অ-জনজাতি (পর্যটক বা অন্যরাজ্য থেকে অভিবাসী মানুষ) বাড়ি ফিরতে না পেরে থানায় এসে আশ্রয় নেন। 

বিলের প্রতিবাদে গুয়াহাটিতেও পথে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ ও আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বেশির ভাগ কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। রাজধানী দিসপুরে যাওয়ার পথে মূল সড়ক গুয়াহাটি-শিলং রোড অবরোধ করেছেন তাঁরা। অবরোধ ওঠাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। ডিব্রুগড়ের চাউলধোওয়ায় পুলিশের লাঠিতে গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েকজন ছাত্র। বিক্ষোভের কারণে ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাবতীয় পরীক্ষা অর্নির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। জনতার একটি অংশ উলঙ্গ হয়েও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আসামে পরিস্থিতি যেন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের রোষের মুখে পড়েন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল। গুয়াহাটির বিজেপি সাংসদ কুইন ওঝার বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়ে বাড়ির উঠোনেই তাঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ায় জনতা। নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এই বিলের প্রতিবাদে ধর্মঘট ডেকেছে। মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সনোওয়াল। কিন্তু তাঁর কনভয়ের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আশঙ্কায় তাঁর যাত্রা পথ বদলাতে হয়েছে।

উত্তর ত্রিপুরার ধলাই জেলার মনুঘাট এবং ৮২ মাইল বাজারে একের পর এক দোকানে আগুন লাগায় প্রতিবাদকারীরা। ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়। তাঁদের আক্রমণে কৃপাসিন্ধু চক্রবর্তী নামে এক ব্যবসায়ী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আগরতলা শহরের উত্তর গেট এলাকায় বিক্ষোভে নামের ধর্মঘটের সমর্থকরা। 

পুলিশ শতাধিক অবরোধকারীকে গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে গুজব ঠেকাতে ত্রিপুরায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ত্রিপুরার সিপাহিজলায় বিক্ষোভে দু’বছর বয়সী একটি শিশু আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। 

উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই ও পশ্চিম ত্রিপুরার জনজাতি (স্থানীয় অধিবাসী) অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। 

পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে যেতে পারে, তার আশঙ্কা করেছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। সোমবারই সংসদে ওই বিল পেশের সময় তিনি বারবার সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি জানান, স্থানীয় মানুষেরই স্বার্থ দেখা হবে, তাই এই বিক্ষোভ দেখানোর কোনও প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে বিক্ষোভের পথে ছেড়ে বেরিয়ে আসারও আবেদন করেন তিনি। কিন্তু অমিত শাহকে যে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তা এ বিক্ষোভ থেকেই স্পষ্ট।

এমএস/এসি