ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

অর্থ পাচার রোধে বিএফআইইউ’র নীতিমালা জারি 

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশিত : ১১:০৩ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার তথা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের আওতায় একটি গাইডলাইন বা নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

একই সাথে এই কার্যক্রম তদারকির জন্য ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কার্যরত এই সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

জারিকৃত নীতিমালায় অর্থ পাচার রোধে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুইফটের মাধ্যমে বার্তা আদান প্রদান ও তা কার্যকর করার আগে যথাযথভাবে যাচাই করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনে গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে বার্তার সঠিকতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে নীতিমালায় পাচার করা অর্থ চিহ্নিত করতে কৌশলগত বিশ্লেষণের জন্য একজন উপ মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নীতিমালা বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকি করবেন। কোন সমস্যা হলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়াল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সিস্টেমস হ্যাক করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে সাড়ে ৩ কোটি ডলার ফেরৎ আনা সম্ভব হলে বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার এখনও ফেরৎ আনা সম্ভব হয়নি। 

এছাড়া বিশ্বব্যাপী হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ চুরির প্রবনতা বেড়ে গেছে। এসব কারণে আগাম সতর্কতা হিসাবে এবারে নীতিমালায় সুইফট বার্তা আদান প্রদানের উপর সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, সুইফট পাসওয়ার্ট হ্যাকড হয়েছিল, নষ্ট্র একাউন্টকে আমদানি বিলের বিপরীতে ডলারে পেমেন্টের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে অনুসারে পেমেন্টে হয়েছিল এবং ব্যাক অফিসে স্টেটমেন্ট পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যাক অফিস সেটি সতর্কভাবে পরীক্ষা করেনি এবং মেডেল অফিস সেটি আমদানির বিপরীতে ডলার পেমেন্টের ক্ষেত্রে ব্রাঞ্চ অফিসের চাহিদাপত্রের (রিকজিশন) সঙ্গে পুনরায় মিলিয়ে দেখেনি। পরের দিন পাউন্ডে পেমেন্টের জন্য নির্দেশনা এসেছিল, কিন্তু পাউন্ড নষ্ট্র একাউন্টে ব্যবহার যোগ্য ছিল না।

ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ পাউন্ড প্লেস করার জন্য নষ্ট একাউন্টকে বলেছিল, কিন্তু নির্দেশনার সমর্থনে কোনো চাহিদাপত্র ছিল না। এরপর ট্রেজারি বিভাগ থেকে নষ্ট্র একাউন্টকে পেমেন্ট বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ডলার পেমেন্ট হয়ে গেছে এবং এটি ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। 

অবশ্য, সুইফট বরাবরই বলে আসছে, তাদের সিস্টেমস হ্যাকড হয়নি। হ্যাকড করা সম্ভবও নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে লেনদেনের বার্তা পাঠানো হয়েছিল। 

নীতিমালায় বলা হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যবসার ইতিহাস, লেনদেন ধরন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, আগাম পর্যালোচনা প্রতিবেদন করে গ্রাহকের ঝুঁকি নিরুপন করতে হবে। ঝুঁকি অনুযায়ী গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে সতর্কতামুলক আচরণ করতে হবে। ঝুকি নিরুপনের জন্য গ্রাহকের আন্তর্জাতিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে খাদ্য সহায়তা, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পের যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক পণ্য, সেবা রফতানি ও সেবা আমদানি, পণ্য রফতানি, বৈদেশিক বাণিজ্যের মূল্য, কোন দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য হচ্ছে, গ্রাহকের ধরন, সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন এসব তথ্য পর্যালোচনা করে গ্রাহকের ঝুকি নিরুপণ করতে হবে। 

এসব বিচারে যেসব গ্রাহকের রেটিং ৭৫ শতাংশের উপরে তাদেরকে টাকা পাচারের জন্য বেশি ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করতে হবে। ৭৫ শতাংশের কম থেকে ৫০ শতাংশের বেশি রেটিং পেলে তাদেরকে মধ্যবর্তী ঝুকিপূর্ণ তালিকায় ফেলতে হবে। ৫০ শতাংশের নীচে হলে তাদেরকে কম ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করতে হবে।

আরকে//