এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৩২ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৯- এই এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা সম্মানজনক অবস্থানে আসতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় বক্তব্যে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতিমুক্ত গতিশীল প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। পদ্মাসেতুর দুর্নীতি মোকাবেলায় সাফল্য উল্লেখ করে কর্মক্ষেত্রে সততা বজায় রাখারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে বিএনপি জামাত জোট দেশ পরিচালনা করেছিল বলে উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, যে খুনিরা আত্মস্বীকৃত, যাদের ইতোমধ্যে সাজা হয়েছে বা কারও কারও সাজা কার্যকরও হয়েছে, যেমন খুনি ফারুক সে হয়ে গেল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী। এর পরবর্তীকালে আরও যেটা দেখলাম, এটা হচ্ছে এরশাদের আমলে আর খালেদা জিয়ার আমলে আত্মস্বীকৃত খুনিদের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসানো হয়। খুনি রশিকে বসানো হলো লিডার অব দ্য অপজিশনের সিটে এবং আরও একটা খুনি হুদাকে মেম্বার অব পার্লামেন্ট করা হলো। তার মানে দেশটা চালাবে কারা? জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছে অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবার, নারী-শিশুকে যারা হত্যা করেছে, সেই হত্যাকারীর, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী- তারাই এ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে! তাহলে সেদেশের উন্নয়নটা কীভাবে হয়? হয়নি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা এদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেনি, সে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে হবে? তারা এ দেশকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল। মানুষের কোনও মূল্য তাদের কাছে ছিল না। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কোনও উদ্দেশ্যই তাদের ছিল না। কাজেই একটা কালো মেঘ ছেয়ে গিয়েছিল আমাদের দেশের উপর। যাইহোক, ২১ বছর পর আমরা সরকারে আসি। প্রথমবার আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারে ছিলাম। তখন আমরা বেশ কিছু উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা কঠিন ছিল। যতটুকু পেরেছি, তা করেছি। এর পর আবার আমরা সরকারে আসতে পারিনি। সেটা না পারারও কারণ ছিল। কারণ আমার দেশের সম্পদ আমি অন্যের কাছে বিক্রি করতে চাইনি। আমার গ্যাস বিক্রি করবে, আমি সেটা দিতে রাজি হইনি। তারপর যারা ক্ষমতায় আসলো, তারা তো গ্যাস দিতে পারেনি, বরং তারা নিয়ে আসলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, দুর্নীতি। দুর্নীতিতে পাঁচবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়েছে। এ একটা অন্ধকার পরিবেশ আমাদের জন্য সৃষ্টি হলো। বিশ্বের কাছে বাংরাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো। যাইহোক, পরবর্তীকালে নির্বাচন হলো ২০০৮ সালে আর আমরা ক্ষমতায় আসলাম ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০১৯- এই এক দশকে আজকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা সম্মানজনক অবস্থানে আসতে পেরেছে। কেন পেরেছে? তার একটাই কারণ, নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমরা চলেছি। এবং দেশকে উন্নত করবো- সেই চিন্তা থেকেই আমরা কাজ করেছি বলেই আজকে এই দেশটা এগিয়ে যেতে পেরেছে। এই চিন্তা যদি আমাদের না থাকত, তবে আমরা দেশকে উন্নত করতে পারতাম না।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতাটা আমার দৃষ্টিতে ভোগের বিষয় না; এটা হচ্ছে একটা দায়িত্ব পালন করার বিষয়; দেশের মানুষকে সেবা করার বিষয়। কাজেই আমি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঘোষণা করেছিলাম যে আমি সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না। কারণ জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব যে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলবো ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। কাজেই আমরা দারিদ্র্য সীমা কমিয়ে এনেছি ২১ ভাগে কিন্তু এটাকে আরও কমাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এটা আমি পারবো।
এসময় সরকারপ্রধান বলেন, একটা অফিসার ইচ্ছে করলে একটা জেলা বা একটা ইউনিয়ন বা একটা উপজেলার চেহারা পাল্টে দিতে পারে, পরিবেশ পাল্টে দিতে পারে, উন্নয়ন দৃশ্যমান করে দিতে পারে। তো সেই ধরনে ইনোভেটিভ আইডিয়া থাকতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দেশটা আমাদের। আজকে যারা নবীন কর্মকর্তা আছে, তাদের ছেলে-মেয়েরাও আগামী দিনে বসবাস করবে। তাহলে সেই প্রজন্মের জন্য আমরা কী করে যাচ্ছি? তাদের জীবনমান কেমন হবে? তো সেভাবেই কোন জায়গাটা কীভাবে উন্নয়ন করতে হবে, সেই জায়গাটায় কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ৫ মাসের কোর্স শেষে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫ তম আইন ও প্রশাসন ক্যাডারের ১২০ জনকে সনদপত্র বিতরণ করেন সরকারপ্রধান। রেক্টর্স এওয়ার্ড গ্রহণ করেন ৩ কোর্সের ১ম স্থান অধিকারী মেধাবী ৩ ক্যাডার। নবীন কর্মকর্তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রেক্টর।
একে//