ভারতে নাগরিকত্ব বিল বাতিল চেয়ে ছয় শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির খোলা চিঠি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২২ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:২৩ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) প্রত্যাহারের জন্য খোলা চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, মানবাধিকার কর্মীসহ প্রায় ছয় শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি। বিতর্কিত ওই বিলে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুসলিম শরণার্থীদের উপেক্ষা করা এই বিলটিকে ‘বিভাজক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
উল্লেখিত খোলা চিঠিতে ভারতের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ‘এনআরসির পাশাপাশি এই বিলও মানুষের জন্য অবর্ণনীয় ভোগান্তি বয়ে আনবে। এটা গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য ভয়াবহ ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। এজন্য আমরা এই বিল প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করতে বলছি।’
বুকার পুরস্কারজয়ী অরুন্ধতী রায় ছাড়াও চিঠিতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন লেখক নয়নতারা সাহগল, অশোক বাজপেয়ি, পল জাকারিয়া, অমিতাভ ঘোষ, শশী দেশপান্ডে, চলচ্চিত্র নির্মাতা অপর্ণা সেন, নন্দিতা দাস ও ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারসহ অনেকে। এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু।
এদিকে ভারতের ‘মুসলিমবিরোধী’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) তীব্র সমালোচনা করে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন দেশটির কয়েকজন সাবেক আইএএস কর্মকর্তা। মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক আইএএস কর্মকর্তা হর্ষ মন্দার বলেছেন, ‘বিলটি পার্লামেন্টে পাস হলে আমি মুসলিম হওয়ার আনুষ্ঠানিক আবেদন করব। তারপর এনআরসির জন্য কোনো নথি জমা দেব না। নথিবিহীন মুসলিমদের যে শাস্তি দেওয়া হবে, নিজের জন্য আমি সেই শাস্তির দাবি তুলব। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের মতো শাস্তি চাইব।’
একই রকমের ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য আইএএসের চাকরি ছেড়ে দেওয়া শশীকান্ত সেন্থিলও। তিনি এনআরসি হলে কোনো নথি জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘আমি নাগরিক নই বলে ঘোষণা দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে যাব।’
শশীকান্ত সেন্থিলের মতোই কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পরে আইএএস হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন কান্নন গোপীনাথন। সেই গোপীনাথন সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, এনআরসি’র বিরুদ্ধে মুসলিমদের উদ্দেশে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিলটা অমানবিক ও অসাংবিধানিক। তাই সরকারি নীতিতে আক্রান্ত হলে মুসলিমদের প্রতিবাদ করার সব অধিকার রয়েছে।
প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তী। তিনি টুইটারে নিজেকে ‘মুসলিম’ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘আমি মুসলিম। ভারতেই আমার জন্ম। আমি ফাতিহা জানি, গায়ত্রীমন্ত্রও জানি। কারণ আমার জন্ম ভারতে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করুণা নন্দী বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের উপরে নীতিগত আঘাত। কিন্তু এনআরসি রোজকার জীবনে বিপজ্জনক।’
গত সোমবার রাতে ৩১১-৮০ ভোটে ভারতের লোকসভার অনুমোদন পায় ‘দ্য সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯’ শীর্ষক বিতর্কিত বিল। গতকাল বুধবার এই বিলটি রাজ্যসভায় উত্থাপন করা হয়। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এই বিলকে ‘মুসলিমবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এএইচ/