বেরোবিতেই উপেক্ষিত ‘বেগম রোকেয়া’
বেরোবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তার নামে নির্মিত এই বিশ্ববিদ্যালয়েই উপেক্ষিত এ মহীয়সী নারী।
প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে নেই রোকেয়ার স্মৃতি চিহ্ন, দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি বা ম্যুরাল কিংবা নেই রোকেয়া বিষয়ক চর্চার কোনও সুব্যবস্থাও।
একইসঙ্গে লেখিকার স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান জেলার মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে অবস্থিত বেহালদশায় থাকা ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’ দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার কথা থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যত কোনও পদক্ষেপই নেননি।
তবে বরাবরের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার দাবি জানান।
জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়ার নামকরণে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানকালীন থেকে নানান কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কদর নেই ‘রোকেয়ার’। অনেকটা নামেই কেবল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
৯ ডিসেম্বর ‘রোকেয়া দিবস’ আসলেই নামমাত্র র্যালি এবং আলোচনা সভাতেই সীমাবদ্ধ থাকে সকল কার্যক্রম। তার আদর্শ চর্চার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব ও সুব্যবস্থা নেই এখানে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রোকেয়া স্টাডিজ নামে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে একটি ১০০ নম্বরের পাঠ্য বিষয় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য বাধ্যতামূলক করে, যা সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত হয়।
কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হওয়ার পর বিষয়টি চালুর কোনও পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে এম নূর-উন-নবীর চার বছরের মেয়াদে রোকেয়া স্টাডিজ চালুর বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর যোগদানের এক বছরের মাথায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর জন্য এবং ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সেমিষ্টার থেকে এই কোর্সটি পড়ানোর জন্য ননক্রেডিট এবং বাধ্যতামূলক ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ কোর্সটি ক্লাসে পড়ানোর এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও এখন অবধি পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কম মনোযোগ থাকায় ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ নামের একটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত হলেও আজ অবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতদিনে রোকেয়ার একটি প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য গড়ে উঠতে পারত, কিন্তু সে কাজটিও করা হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়ার জীবনদর্শন নিয়ে আরো যত্নশীল হওয়া উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বলেন, ‘রোকেয়ার প্রতিকৃতি অবশ্যই থাকা দরকার এবং এটার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।’
বর্তমানে এই উদ্যোগের অগ্রগতি কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি উপাচার্য স্যারই ভালো বলতে পারবেন।’
এআই/এনএস