ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ব্রেক্সিট প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জনসন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১৩ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

সকল জরিপ ও বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবারও ডাউনিং স্ট্রিটে বসছেন বরিস জনসন।

ব্রেক্সিট পাশ করাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে থেরেসা মে সরে গেলে তার উত্তরসুরী হিসাবে জায়গা পান তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। 

তবে, ক্ষমতায় এসে ব্রেক্সিট ইস্যুতে সিনেট সদস্যদের কয়েক দফা বিরোধীতা আর বিরোধীদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা। অনেকে ভেবেছিল তাকেও হয়-তো প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে হবে। 

এমনকি বিরোধীরা আগাম নির্বাচনের দাবি তোলে। এক্ষেত্রে তিনি ব্রেক্সিট ইস্যুতে বিরোধীদের সায় দেয়ার শর্তজুড়ে দেন। সমালোচকরা বলেছিলেন যে, দলের মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য তাকে এই দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করেছে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। 

ব্রেক্সিটকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ব্রিটেনে পাঁচ বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৬৫০টি আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনের ফলাফলই জানা গেছে। 

কনজারভেটিভ দল মোট আসন পেয়েছে ৩৬৩টি এবং লেবার পার্টি পেয়েছে ২০৩টি আসন। নির্বাচনে জয়ী হতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৬ টি আসন। এই সংখ্যা ভালোভাবেই পার করতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রীর দল।

নির্বাচনে জয়ী হবার খবর জানার পরেই জনসন সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভোটাররা যে আস্থা রেখে ভোট দিয়েছেন তা পূরণে তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাবেন। এই নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে তার দল।’এর মধ্যদিয়ে বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে জনপ্রিয়তার যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল, তার কঠোর জবাব দিলেন তিনি। 

এর ফলে, ব্রেক্সিট চুক্তিতে বিরোধীদের দমিয়ে আনতে অনেকটা সহজ হয়ে গেল বরিসের। এ ইস্যুতেই মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় তিন তিনটি নির্বাচন দেখলো ব্রিটেন। ফলে, বরিস জনসনকে ব্রেক্সিট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যা দেয়া এখন সময়ের দাবি।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বেশ খুশি। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রিটেনের মানুষেল একটি পরিষ্কার প্রশ্ন ছিল। সেটি হচ্ছে, তারা ব্রেক্সিট চায় কি না। তারা এটাও বুঝতে পেরেছে যে কনজারভেটিভ পার্টি জয়লাভ করলে ব্রেক্সিট হবে। ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি কেটে যাবে। ব্রেক্সিট হবে এবং এগিয়ে যাবে।’

বিভক্ত মতামত এবং মনোযোগ আকৃষ্টকারী বিতর্কের মধ্য দিয়ে নিজের পেশা জীবন গড়েছেন জনসন- প্রথমে একজন সাংবাদিক হিসাবে, পরে যোগ দেন রাজনীতিতে। 

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ায় তার অনেক সমালোচক মনে করেছিলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার মতো যথেষ্ট দক্ষতা তার নেই।’কিন্তু তাদের সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছেন জনসন।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে একটি আসনে জিতে পার্লামেন্টে আবার ফিরে আসেন বরিস জনসন। পরের বছর ব্রেক্সিট গণভোটের আগেভাগে ওই ব্যাপারে জনসনের অবস্থান খুব বেশি পরিষ্কার ছিল না।

তিনি একটি সংবাদপত্র নিবন্ধে যুক্তি তুলে ধরেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া উচিত এবং আরেকটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন যেখানে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের ইউনিয়নে থাকা উচিত।

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে অবস্থান নেন এবং তার অর্থ হলো দলের তৎকালীন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া।

নির্বাচনে ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়ে এবং ক্যামেরন পদত্যাগ করেন, তখন কনজারভেটিভ দলের নেতা হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার একটা চেষ্টা করেন জনসন।

কিন্তু থেরেসা মে বিজয়ী হিসাবে আবির্ভূত হন। ভোটাভুটির আগেই অন্য সকল প্রার্থীদের সরে যেতে হয়। কিন্তু ব্রেক্সিট চ্যাম্পিয়ন হিসাবে জনসনের ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

গণভোটের প্রচারণার সময় জনসনের নাম সন্দেহজনক একটি দাবির সঙ্গে জড়িয়ে যায় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া হলে যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগে প্রতি সপ্তাহে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড যোগ করা যাবে। তবে এটি ব্রেক্সিট সমর্থকদের মধ্যে তার অবস্থানের ক্ষতি করতে পারেনি।

জনসন পরবর্তীতে থেরেসা মে’র মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসেন এই দাবি করে যে, ব্রাসেলসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় তার (থেরেসা মে) আরো কঠোর ভূমিকায় থাকা উচিত।

দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর-এবং প্রধানমন্ত্রী- বরিস জনসন কখনোই চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাকে নাকচ করেননি।

তিনি বলেছেন, সাধারণ নির্বাচনে যদি কনজারভেটিভ পার্টি বিজয়ী হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারির মধ্যেই বেরিয়ে আসবে। এ নির্বাচনে জয়ের মধ্যদিয়ে তা হতে যাচ্ছে।

নির্বাচনে এ জয়ের ফলে ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনে জোরালো মতামত এবং মানুষকে আকৃষ্ট করার মতো ক্ষমতা ভোটারদের হৃদয় জয় করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

এআই/