নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়ার ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩১ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অংশ হিসেবে নেওয়া ব্যবহারিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (১১ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানানো হয়।
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি সুপারিশ ভর্তি পরীক্ষা কমিটিতে না রাখায় গতকাল রাতে ওই বিভাগে ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ই’ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বর্তমানে দেশের বাইরে । তিনি ফিরে এলে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার থেকে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ময়মনসিংহে চলা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গত মঙ্গলবার পরীক্ষা শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয়ের পরিবেশনা থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত চলে। ওই দিন ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি রাজবাড়ীতে। ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় তিনি সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি। দেরিতে পৌঁছায় ওই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আর পরীক্ষায় অংশ নিতে যাননি। রাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকেন। পরে গতকাল বুধবার সকালে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতে যান।
‘ই’ ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা । ওই ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ওই শিক্ষার্থীকে জানান যে, নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী তাঁর জন্য নির্ধারিত দিনে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে পরের দিন আর কোনো সুযোগ থাকে না। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমরা সময় বর্ধিত করলেও সেদিনই কোন পরীক্ষার্থী এলে অবশ্যই আমরা তার পরীক্ষা নিতাম।কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী রনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের কাছে যায় বলে জানায়।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব এসে পরীক্ষা নেয়ার জন্যে বলেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের। এসময় শিক্ষকরা তা বিধি সম্মত নয় বললে সেখান থেকে চলে যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের গালাগাল দেন এবং শিক্ষকদের কক্ষের দরজা,জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।
এসময় পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা ভীত হয়ে পড়লে বিভাগের শিক্ষকরা তাদের (ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের) রুমে নিয়ে যান এবং দরজা আটকিয়ে দেন যেন পরীক্ষার্থীরা ভয় না পায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেছেন, পুরো বিষয়টিই অনাকাঙ্খিত। এরকম বিতর্কিত কর্মকান্ড আমরা কখনোই আশা করিনা। আগামীকাল উপাচার্যের সিদ্ধান্তে অনুষ্ঠিতব্য জরুরী সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করি আমরা ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
ছাত্রলীগের ভাঙচুরের ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থে বলেন- সবকিছুতে তার (রাকিব) হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া ঠিক নয়। এতে ছাত্রলীগকে সে বিতর্কিত করছে।
ভাঙচুরকাণ্ডের ব্যাপারে জাককানইবি শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে সারা রাত কেঁদেছেন। সকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে কাঁদতে দেখে আমার কাছে আসেন। আমি সবার অনুরোধে শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ নিয়ে যাই। কিন্তু অনুরোধ রাখা না হলে আমি ফিরে আসি। ভাঙচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
কেআই/আরকে