অধ্যক্ষকে লাঞ্চিতের ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার
অধ্যক্ষকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে লাঞ্চিতের ঘটনায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চার শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘১৬ জনের মধ্যে চার শিক্ষার্থীর স্থায়ী ছাত্রত্ব বাতিল, পাঁচজনের মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা এবং সাতজনকে টিসি (ট্রান্সফার সাট্রিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিকে পাঁচ বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে হিচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সভায় দোষি সাব্যস্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সভায় যাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার মূলহোতা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।
সরাসরি ঘটানার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্রসহ অনান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
এরা হলেন, ২০১৫-১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেক্ট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।
এছাড়াও পরক্ষভাবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্যত্র বদলি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন, ২০১৫-১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেক্ট্রোনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চলমান রেখে সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। এ কারণে আগামী পাঁচ বছর এখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙ্গে ছাত্র কমনরুম বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘বর্তমানে এখানকার শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে বিনা পোশাকে কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়েও কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, ‘মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করেছিল। পরে সেটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনার মূলহোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজনসহ এজাহারের বাইরে থাকা আরো ১৩ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে।’ শীঘ্রই তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এআই/