ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

‘কৃষক উৎপাদন করতে পারলে সরবরাহও বেড়ে যাবে’ (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৮ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

এসিআই এগ্রি বিজনেসেস- এর এমডি এবং সিইও ড. ফা. হ. আনসারী।

এসিআই এগ্রি বিজনেসেস- এর এমডি এবং সিইও ড. ফা. হ. আনসারী।

দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২০। আর কয়েক দিন পরই বিদায় নিচ্ছে ২০১৯। চলতি বছরে অর্থনীতির অনেক উত্থান-পতন দেখেছে বিশ্ব। বাংলাদেশের অর্থনীতিরও অনেক দিক পরিবর্তন হয়েছে। চলতি বছর নিত্য পণ্যের বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল পেঁয়াজ। আগামী বছর কেমন যাবে পেয়াজের বাজার। একুশে টিভির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সাম্প্রতিক সামগ্রিক অর্থনীতির বিষয়ে কথা বলেছেন এসিআই এগ্রি বিজনেসেস- এর এমডি এবং সিইও ড. ফা. হ. আনসারী।

সাম্প্রতিক পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে খাদ্যে ঐতিহাসিকভাবে পেঁয়াজের ব্যবহার আছে। এর সুযোগ নেয় বিভিন্ন পক্ষ। এক্ষেত্রে সুবিধাবাদীদের দুইটা গ্রুপ আছে। একটা গ্রুপ আছে, যারা সুবিধাবাদী এবং যাদের বিভিন্নভাবে প্রভাব আছে। অনেক প্রভাব ও সুরক্ষা নিয়ে তারা ব্যবসা করে। আরেকটা গ্রুপ আছে, যারা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের ক্ষমতা বা প্রভাব সেরকম নেই। তারা ভয়ে আর পেঁয়াজ আমদানি করবে না। এবার পেঁয়াজ সংকট নিয়ে সুবিধাবাদীরাই লাভবান হয়েছে বেশি।

‘এখন পেঁয়াজ তো কারখানায় উৎপাদন হয় না, কৃষক উৎপাদন করে। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষক কিন্তু সব কিছুই বেশি দামে কিনে। তাই কৃষককে পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে। এটা আমাদের সামাজিক কাজ। এতে করে যারা পেঁয়াজ কিনে খাবে, তাতে ভোক্তাদের একটু কষ্ট হবে। এক্ষেত্রে ভোক্তারা এটা করতে পারে যে পেঁয়াজ একটু কম খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে কৃষক যদি উৎপাদন করে তবে সরবরাহও বেড়ে যাবে।’

এসিআই এগ্রি বিজনেসেস- এর এমডি বলেন, কৃষক যদি তার পণ্যের ভালো মূল্য পায়, তবে কৃষক বেশি করে উৎপাদন করবে এবং এতে করে আমদানি নির্ভরতা কমবে। আর কৃষক যদি তার পণ্যের ভালো মূল্য পায়, তবে তারা পণ্য বেশি করে উৎপাদন করতে চাইবে। এতে করে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দূর হবে। 

১৯৭২ সালে অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ছিল ৬০ শাতাংশ, বর্তমানে ১৩ শতাংশ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে দেখতে হবে অগ্রগতির অবস্থাটা কী। কৃষি অর্থনীতিতে অগ্রগতি কত? আগে কত ছিল আর এখন কত? অনেক পার্থক্য। আগে অগ্রগতি এত ছোট ছিল আর এখন অগ্রগতি এত বড় হয়ে গেছে, যেটা অবিশ্বাস্য। এখন আয়ও কমে গেছে। এর কারণ হলো, আমাদের গার্মেন্টস রফতানি অনেক বেড়ে গেছে। যারা চাকরি করে তাদের আয় অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু কৃষিতে এত বেশি প্রযুক্তিগত সৃজনশীল অগ্রগতি হয়নি। প্রযুক্তিগত সৃজনশীল অগ্রগতি কী হতে পারে? একটা হলো, উৎপাদন পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা ভালো থাকলে যা হবে, কম খরচে বেশি উৎপাদন করলে তা জিডিপিতে যুক্ত হবে। এটা আমাদের খুব বেশি হয়নি। ইদানিং এটা শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের কৃষকদের ভ্যালুয়েডিশন তেমন একটা হয় না। যা উৎপাদন করি সেটাই কিন্তু আমরা রান্না করে খাই। আমরা যেটা উৎপাদন করি সেটাকে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করে খুব বেশি একটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। যেমন- ভুট্টা। ভুট্টা কত করে, ১৮ টাকা করে কেজি। আর এই ১৮ টাকা কেজি ভুট্টা কিনে ৩০০ গ্রাম ভুট্টার সঙ্গে একটু এটা ওটা মিশিয়ে প্যাকেটে ঢুকালে ৩০০ গ্রাম ভুট্টার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন ৫ টাকার ভুট্টাকে যদি ৩০০ টাকা বানাতে পারি, এই যে পার্থক্য হলো, সেটাই কিন্তু জিডিপি। ওই পার্থক্য আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কৃষির সব ক্ষেত্রেই এটা হয়েছে। কাজেই ওই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডেনমার্কে কৃষি এত বড় না। কিন্তু কৃষির রফতানি অনেক বড়। পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তর। কী করে সম্ভব? কৃষির কাঁচামাল দ্বারা তারা প্রক্রিয়াজাত করে প্যাক করে, যার কারণে তাদের কৃষি অবস্থা এত বড় হয়ে গেছে। তাই ওই জায়গায় আমাদের যেতে হবে। আর তৃতীয়ত, আমাদের প্রয়োজনীয় সহায়তায় কৃষি অনেক দুর্বল।

২০১৯ সালের অর্থনীতি নিয়ে আনসারী বলেন, আমরা জানি যে আসলে কী হয়েছে। এখানে দুইটি এরিয়া আছে ক্রেতা এবং বিক্রেতা। বিক্রেতাদের মধ্যে দোকানদার আছে, ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা আছি। আমরা জানি, যে দামে আমরা আগে কিনতাম অল্প ক্ষেত্রে কিছু পণ্য কম দামে কিনছি। কিন্তু যারা বিক্রেতা, আমরা বুঝতে পারছি, ৬-৭ শতাংশ সুদে ২/৩ বছর আগে আমরা যে ব্যবসা করেছি, সেটা কিন্তু এখন ১৩-১৪ শাতংশ হয়ে গেছে। এটা একটা বড় পার্থক্য। ব্যবসার ক্ষেত্রে যদিও মনে হয় অনেক কিছু বেশি বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু সব মিলিয়ে লাভ কিন্তু ৫-৭ শতাংশের বেশি করা সম্ভব হয় না।  

ভিডিওটি দেখুন...

একে//