জঙ্গিদের হামলার টার্গেট ছিল পুলিশ: র্যাব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:১২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
চাপাতি দিয়ে পেছন থেকে পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলার পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিদের। বুধবার রাতে রাজধানীর শাহ আলীর রইনখোলা ঈদগাহ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনটির চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মোবাইল ফোনে এমন পরিকল্পনার তথ্য জানতে পারে র্যাব-৪।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকের এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন- আরিফুর করিম চৌধুরী ওরফে আদনান চৌধুরী, মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু, আব্দুল আল মামুন ওরফে আসাদুল্লাহ হিল গালিব ও নাজমুল হাসান। এ সময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, লিফলেট, ইলেকট্রনিক সার্কিট, ডিভাইস, ব্যাটারি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, ‘জঙ্গিদের মোবাইল ফোন ফরেনসিক করে আমরা জানতে পেরেছি তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল। বিশেষ করে আকস্মিক চাপাতি ব্যবহার করে পুলিশের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল। আর হামলার সময় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস বা ফোন ব্যবহার করবে না। দুই-তিনজনের ছোট্ট গ্রুপ বা সেলে বিভক্ত হয়ে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। পুলিশকে জখম করতে পেছন থেকে ধারালো চাপাতি বা চাকু ব্যবহার করতো।’
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জঙ্গি সংগঠনটির ঢাকা বিভাগীয় প্রধান জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ‘গ্রেপ্তার আদনান চৌধুরী এই গ্রুপের প্রধান। এর আগে তিনি হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের কম্পিউটার ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে একটি ব্যাংকের আইটি শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১৫ সালে খিলগাঁও থানায় গ্রেপ্তার হলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রায় দুই বছর পর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দল পরিবর্তন করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ঢাকার একাংশের নেতৃত্ব পায়। এরপর কুমিল্লার অঞ্চলের আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুইজন মিলে জঙ্গিবাদ সম্প্রসারণ ও প্রচারের জন্য কাজ শুরু করে। বর্তমানে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করছিলেন আদনান চৌধুরী।’
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি এই জঙ্গিরা প্রটেক্টটিভ অ্যাপস ও ব্রাউজার ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের প্রচার, সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এবং নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। বিশেষ করে প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাতিল করে শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চান। তাদের গ্রেপ্তারের সময় আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছে। তাদের নাম পেয়েছি, ধরতে র্যাব কাজ করছে।’
অক্টোবর থেকে এই দলের ২৩ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক জানান, ‘এই গ্রুপের শেষ ব্যক্তি যিনি আছেন তাকে গ্রেপ্তার করবে র্যাব। এরা মূলত সেলে বিভক্ত বলে এই গ্রুপে কতজন আছে সেটা আমরা এখনো নিশ্চিত না। আর একটা সেলের সঙ্গে আরেকটা সেলের যোগাযোগ দেখতে গেলে অনেক সময় লাগে। র্যাবের পাশাপাশি পুলিশের আরও দুটি বিশেষ ইউনিট তাদের ধরতে কাজ করছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং হরকাতুল জিহাদ একই দলে যুক্ত। কারণ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ছেড়ে অনেকে এই দলে যোগ দিয়েছে। কারণ হরকাতুল জিহাদের অনেক নেতার নামে বেশ কয়েকটা রায় হয়েছে। রায়ে অনেকের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরও রায় পেন্ডিং রয়েছে।’
জঙ্গিরা গ্রেপ্তারের পরও অনুতপ্ত না, এমনটা জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলে কিংবা জঙ্গিবাদে জড়িত এটা নিয়ে তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।’
জঙ্গিবাদ নির্মূলে দুটি মাধ্যমে আছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘একটি গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা আরেকটি মটিভেশন করা। সামাজিকভাবে তাদের বোঝাতে পারলে এই পথ থেকে সরে আসবে অনেকে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ এ ধরনের কাজ করছে। র্যাবও কাজ করছে। জঙ্গিরা কেউ আত্মসমর্পণ করতে চাইলে আমরা সেই সুযোগ দিচ্ছি। সাধারণ জীবনযাপনের আশায় র্যাবের কাছে বেশ কিছু জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে।’
আরকে//