ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

স্যার ফজলে হাসান আবেদ : আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০১:০৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার

বছরের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ হারালো তার এক রত্নকে। ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ দেশের এক মহান ব্যক্তিত্ব। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি চলে গেলে না ফেরার দেশে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

স্যার ফজলে হাসানের হাতে গড়া ব্র্যাক আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সম্মানিত এনজিও। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের তৃণমূলের মানুষের সেবা করতে গিয়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন ফজলে হাসান আবেদ। এক লাখ কর্মী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ১১টি দেশে ১২০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চলেছে ব্র্যাক।

জন্ম ও লেখাপড়া
১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন ভূস্বামী। তার মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন ঐ অঞ্চলের জমিদার।

আবেদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে দেশভাগের ঠিক আগে তার বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি বানিয়াচংয়ে চলে আসেন কুমিল্লা জেলা স্কুলে। সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই লেখাপড়া করেন। এরপর চাচা জেলা জজ হিসেবে পাবনায় বদলি হওয়ায় তিনিও চাচার সাথে পাবনায় চলে যান এবং পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি হোন। তিনি ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। আবেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। পরে তিনি ১৯৫৬ সালের অক্টোবর মাসে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচার বিষয়ে পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন।
 
দুই বছর পর তার মনে হলো এ লেখাপড়া দেশের কোন কাজে আসবে না। তাই তিনি ১৯৫৬ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে পরবর্তীকালে তিনি ১৯৬২ সালে লন্ডনের চাটার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসে চার বছরের পেশাদার কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৪ সালে কানাডার কুইনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডক্টর অব ল' এবং ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডক্টর অব এডুকেশন' ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াকালীন সময়ে ১৯৫৮ সালে তার মায়ের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তিনি লন্ডনে চাকরিতে যোগদান করেন। কিছুদিন চাকরি করার পর চলে যান কানাডা। সেখানেও একটি চাকরিতে যোগ দেন। পরে চলে যান আমেরিকা। ১৯৬৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে তিনি শেল অয়েল কোম্পানিতে যোগদান করেন এবং পদোন্নতি লাভ করে ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এখানে চাকরিকালীন ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়। এ সময়ে তিনি 'হেলপ' সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মনপুরা দ্বীপে গিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন

মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্যার ফজলে হাসান আবেদ শেল অয়েল কোম্পানির উচ্চপদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইসলামাবাদ ও কাবুল হয়ে লন্ডনে চলে যান। ১৯৭১ সালের মে মাসে লন্ডনে গিয়ে সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সম্পৃক্ত হন স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য গড়ে তোলেন ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটো সংগঠন।
 
‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সমর্থন আদায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত তৈরি এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত কার্যকলাপ বন্ধে ইউরোপীয় দেশসমূহের সরকারকে সক্রিয় করে তোলা।
 
‘হেলপ বাংলাদেশ’র কাজ ছিল অর্থ সংগ্রহ করে মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি, প্রচারপত্র বিলি, টাইমস অব লন্ডনে লেখা ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা, রেডিও ও টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়া, ইউরোপীয় দেশসমূহের পার্লামেন্ট সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে স্বদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিবিধ কর্মতৎপরতা পরিচালনা করা। পথ নাটক, তহবিল সংগ্রহসহ নানা ধরণের কাজেও তিনি ও তাঁর বন্ধুরা সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

ব্রাক গঠন
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে তিনি তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে ত্রাণকাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা এলাকায় কাজ শুরু করেন। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায়ই তিনি ব্র্যাক গড়ে তোলেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জন্ম হয় ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটি বা ব্র্যাকের। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে তাঁর দীর্ঘ অভিযাত্রার সূচনা ঘটে। দরিদ্র মানুষ যাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে তিনি তাঁর কর্মসূচি পরিচালনা করেন।

তবে ১৯৭৩ সালে যখন পুরোদস্তুর উন্নয়ন সংস্থা হিসাবে ব্র্যাক কার্যক্রম শুরু করে, তখন তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি।' তবে সংক্ষিপ্ত নাম ব্র্যাকই থাকে।
চার দশকের মধ্যে তিনি তাঁর অভূতপূর্ব নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটান। ব্র্যাক পরিণত হয় বিশ্বের সর্ববৃহত্ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়।

এক লাখ কর্মী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ১১টি দেশের ১২০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চলেছে ব্র্যাক। বেসরকারি উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া ফজলে হাসান আবেদ সমাজকর্মের জন্য স্যার উপাধি পাওয়া ছাড়াও বিশ্বের বহু সম্মানিত পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানিত করেছেন। তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন উদ্যমী, দারুণ সফল ও স্বপ্নদ্রষ্টা।

ব্রাক থেকে অবসর
স্যার ফজলে হাসান আবেদ গত ৭ আগস্ট ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদ থেকে অবসর নেন। ৪৭ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির বিষয়টিকে তুলে ধরেছিলেন। তবে এরপর তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার এমেরিটাস হিসেবে ছিলেন।
ভবিষ্যতে ব্র্যাককে কোন অবস্থানে দেখার স্বপ্ন দেখেন তিনি, বিদায়ের মুহূর্তে একটি চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের সে কথাও জানান। তার আবেগঘন ওই চিঠি নাড়া দেয় ব্র্যাকের প্রতিটি কর্মীকে।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির বিষয়ে ওই চিঠিতে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমি ব্র্যাকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। ব্র্যাকের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যাতে আমার অবর্তমানেও ব্র্যাক তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হার্ভার্ড ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্যার আবেদ। পরে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশের (এডাব) চেয়ারপারসন হিসেবে নেন। একই সময়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জেনেভার এনজিও কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন হেলথ রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্যার আবেদ।

১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গণস্বাক্ষরতা অভিযানের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পোভার্টি এলিভিয়েশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে সার্কের সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পোভার্টি এলিভিয়েশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ এবং ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল মেয়াদে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনে তিনি।

১৯৯৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সদস্য, ১৯৯৮ ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আইডিএস) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত  আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), ফিলিপাইনের বোর্ড অব গভর্নরস, ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন স্যার আবেদ।

২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অলটারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের (ইনাফি) গ্লোবাল চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান। এ ছাড়া ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইউএন কমিশন অন লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব দি পুওর’র (সিএলইপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এই বীর বাঙালিকে ২০১০ সালে জাতিসংঘের তদানীন্তন মহাসচিব বান কি মুন বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ‘স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গে’র একজন হিসেবে নিযুক্তি প্রদান করেন। তাকে  ‘গ্লোবাল গ্রেট’ স্বীকৃতিতে ভূষিত করে অশোকা। এই প্রতিষ্ঠানের ‘গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন আবেদ।

২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউএন সেক্রেটারি জেনারেলস গ্রুপ অব এমিনেন্ট পারসনস ফর লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দেশের সেরা এই সন্তান। ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইউএন সেক্রেটারি জেনারেলস লিড গ্রুপ অব দি স্কেলিং এবং অশোকা গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রোপ্রেনিওরশিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

তার লক্ষ্য

মানুষের জীবনে লক্ষ্যতে অটল থাকতে পারলে এবং কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসে। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্যার ফজলে হাসান। ২০১৫ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় ওয়ার্ল্ড ফুড পুরস্কার পান তিনি। ওই সময় তিনি নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা যা করেছি, তা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকেই করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থেকে বের করে আনা। কারণ আমরা অনুভব করি যে, দারিদ্র্য অমানবিক রূপ নেয়। অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে মানুষকে বের করা সম্ভব। এ জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশের অঙ্গীকার প্রয়োজন।’

পুরস্কার

সামাজিক উন্নয়নে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য জীবনে তিনি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার জীবনের প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে- র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮০), ইউনেস্কো নোমা পুরস্কার (১৯৮৫), অ্যালান শন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০), উনিসেফ মরিস পেট পুরস্কার (১৯৯২), সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার (২০০১), শোয়াব ফাউন্ডেশন 'সামাজিক উদ্যোক্তা' পুরস্কার (২০০২), গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩)।

জাতীয় আইসিএবি (২০০৪), জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুব-উল-হক পুরস্কার (২০০৪), গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার (২০০৪), হেনরি আর. ক্রাভিস পুরস্কার (২০০৭), প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কার (২০০৭), পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৭), ডেভিড রকফেলার পুরস্কার (২০০৮)।

দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ব্রিটেন কর্তৃক ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে 'নাইটহুডে' ভূষিত হন। বাংলাদেশের একমাত্র নাইটহুড উপাধি প্রাপ্ত ব্যক্তি তিনি।

এছাড়া আরও রয়েছে এন্ট্রাপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার (২০০৯), ওয়াইজ পুরস্কার (২০১১), সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ওপেন সোসাইটি পুরস্কার (২০১৩), লিও টলস্টয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক (২০১৪), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (২০১৫), ইয়াইদান পুরস্কার (২০১৯)।

এমএস/