ঝাড়খণ্ডের নির্বাচন ও মোদি বর্জন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এআরসি নিয়ে প্রবল বিতর্কের মাঝেই ভারতের ঝাড়খণ্ডে ৫ দফায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এই ভোটের ফলাফল বিশেষ তাৎপর্যবাহী ছিল শাসক বিজেপি ও বিরোধী শিবিরের কাছে।
পূর্ব ভারতের রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনায় ব্যাপক জয় পেয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেস জোট। এর ফলে চলতি বছরে আরও একটা রাজ্য হারাল বিজেপি।
এক বছরে এই নিয়ে মোট পাঁচটি রাজ্যে পরাজয় হলো বিজেপির। গত বছরে, তারা পরাজিত হয়েছিল রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। এ বছরে, লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর, বিজেপি ক্ষমতাচ্যূত হয় মহারাষ্ট্রে।
গত পাঁচ বছর ঝাড়খণ্ড শাসন করেছে বিজেপি ও তার শরিক এজেএসইউ, জেভিএম(পি) জোট। কিন্তু জাত-পাতের রাজনীতির জেরে আদিবাসী ও জনজাতি মহলে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিজেপির খারাপ ফলের কারণ হিসেবে এই বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে জনমত সমীক্ষায়।
এছাড়াও রয়েছে গত পাঁচ বছর ধরে শাসনের নেতিবাচক প্রভাব। ঝাড়খণ্ডের মসনদ ধরে রাখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ একাধিকবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে যান। তবে, কংগ্রেস বা জেএমএম জোটের মতো স্থানীয় ইস্যুকে প্রচারে তেমন গুরুত্ব দেননি তারা। উল্টো, ৩৭০ ধারা বিলোপ, রাম মন্দির, তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী আইনকেই প্রচারে পুঁজি করেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি বুঝতে পেরেছে, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় তাদের পরাজয় ঘনিয়ে আসছে। তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ২৮টির মধ্যে মাত্র ২টিতে জেতে কেন্দ্রের শাসকদল। দলের নেতারা অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে স্বীকার করেছেন, শুধু আদিবাসী ভোটারদের ক্ষোভই নয়, মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের, দলের নেতাদের প্রতি অহংকারী মনোভাবও খারাপ ফলের জন্য দায়ী।
ঝাড়খণ্ডে মোট আসন ৮১। ম্যাজিক ফিগার ৪১। ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবির জিতেছিল ৩৭ আসন। পাঁচ আসনে জেতা এজেএসইউ-এর সমর্থনে সরকার গঠন করে। পরে ৬ বিধায়কের দল বাবুলাল মারান্ডির জেভিএম(পি) শাসক শিবিরের জোটে যোগ দেয়। কংগ্রেস ও জেএমএম জিতেছিল যথাক্রমে ৬ ও ১৭ আসনে। এবার বিজেপি একাই প্রতিন্দন্দ্বিতা করছে ভোটে। অন্যদিকে, হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বে জেএমএম, কংগ্রেস ও আরজেডির সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে লড়েছে।
এবারে ৩০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দফায় ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যা ৪১-এর ধারেকাছেও যেতে পারেনি বিজেপি। ৮১টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৫টি আসনে জয়লাভ করল তারা, ২০১৪ সালের ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে পাওয়া আসন থেকে ১২টি আসন কম পেল এবার। সেখানে কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোট ৪৭ টি আসনে জয় পেল, গতবারের তুলনায় ২২টি আসন বেশি পেল তারা। এতে বিজেপির হাত থেকে ফস্কে গেল রাজ্যটি।
পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে বিজেপি। জেএমম নেতৃত্বাধীন জোটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দলের সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ঝাড়খণ্ডের মানুষের রায় মাথা মেতে নেবে দল।
ঝাড়খণ্ড হাতছাড়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখন বিজেপির সরকার রইল দেশের ৩৫ শতাংশ রাজ্যে, যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৭১ শতাংশ রাজ্যে, সেই সময় পুরো হিন্দি বলয়ে ক্ষমতায় ছিল গেরুয়া শিবির।
একে//