চট্টগ্রাম মাতালেন যারা
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
মেহেদী হাসান রানা
চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলে শেষ হয়েছে ঢাকার প্রথম পর্ব ও চট্টগ্রাম পর্বের খেলা। এরমধ্যে ঢাকায় বেশ কয়েকটা একতরফা ম্যাচ হলেও চট্টগ্রামে রান উৎসব ও ফলাফল বেশ আনন্দ দিয়েছে দর্শককে। সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার। আর দলগতভাবে অনন্য রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
বিপিএলের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচের খেলা সম্পন্ন হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচগুলোতে ঘটে যাওয়া হাইলাইটস এখানে তুলে ধরা হলো-
শক্তিশালী চট্টগ্রাম, রাজকীয় রাজশাহী:
খেলে ফেলা সাতটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিতে অন্যদের থেকে নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। যদিও গত দুই সপ্তাহের শিডিউলের কারণে এই দলটির ম্যাচ খেলার পরিমাণ অন্যদের থেকে বেশি। তবে, এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহর দল যে দাম্ভিকতার সঙ্গেই আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা বলা বাহুল্য।
প্রথম দিনেই সিলেট থান্ডার্সকে বিধ্বস্ত করার পর ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে হাই স্কোরিং ম্যাচে জয়সহ টানা তিনটি জয় তুলে নেয়ার আগে তারা খুলনা টাইগারদের কাছে হেরে যায়। ইমরুল কায়েস, চ্যাডউইক ওয়ালটন, আভিস্কা ফার্নান্ডোরা রান করেছেন দেদারছে। তবে মেহেদী হাসান রানা, কেসরিক উইলিয়ামস ও মুক্তার আলীর সমন্বয়ে গড়া পেস ত্রয়ীও সমানভাবে ভূমিকা রেখেছে দলের জয়ে।
পয়েন্ট টেবিলের দিকে লক্ষ্য করলে, চট্টগ্রামের ঠিক নীচেই রয়েছে রাজশাহী রয়্যালস। যারা তাদের খেলা পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচেই জিতেছে। ঢাকা প্লাটুন একই সংখ্যক ম্যাচ জিতলেও দলটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে রাজশাহীর চেয়ে একটি বেশি।
দলনেতা আন্দ্রে রাসেলের অলরাউণ্ড নৈপূণ্য এবং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক পারফর্ম দলের জয়ে রাখছে কার্যকর ভূমিকা। পাশাপাশি রবি বোপারা, শোয়েব মালিক, আফিফ হোসাইনের মত অলরাউণ্ডার ভালোই সাপোর্ট দিচ্ছে দলকে।
বিপিএলের মূল শক্তি ক্যারিবীয়রা
বিপিএলের বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা অংশ ক্যারিবীয়রাই। আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সদের মেরুদন্ডই হল ক্যারিবীয় ব্রিগেড। যেখানে ইতোমধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। দুই ফিফটিতে ১৫৬.৮৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৪০।
তার সঙ্গে নিজ নিজ দলের জয়ে অবদান রাখছেন জনসন চার্লস, আন্দ্রে ফ্লেচার, আন্দ্রে রাসেল, লেন্ডল সিমন্স এবং উইলিয়ামস। ফ্লেচার তো হাঁকিয়েছেন চলতি বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিটিই। আর রাজশাহীর অধিনায়ক রাসেল ৯ উইকেট নিয়ে অবস্থান করছেন উইকেট শিকারীর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
তবে, এবারের বিপিএলের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তটি ছিল- উদ্বোধনী দিনে কৃসমার সান্টোকির বিতর্কিত নো-বলটি। যখন এই বাঁহাতি দ্রুত গতির বোলার তার বল ছুড়তে গিয়ে ক্রিজ থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি সামনে পা ফেলেছিলেন, যা চলতি বিপিএলের শুরুতেই দারুণ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
সেরা ব্যাটসম্যান
এ তো গেল দল ও ক্যারিবিয়দের কথা, এখন আসুন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আসা যাক। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ঢাকা পর্বে যার ব্যক্তিগত নৈপূণ্য সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে, সবার নজর কেড়েছে তা হলো- মুশফিকের ৫১ বলে ৯৬ রানের ইনিংসটি।
তবে চট্টগ্রাম পর্বে এসে আরও দুটি স্মরণীয় ও সেরা ইনিংস দেখে ব্যাপক বিনোদিত হয়েছে দর্শক-সমর্থকরা। তা হলো- সিলেটের বিপক্ষে খুলনার ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারের ৫৭ বলে খেলা ১০৩ রানের ইনিংস। যা এখন পর্যন্ত বিপিএলের সেরা ইনিংস।
এরপর অবশ্য আরও একটি সেঞ্চুরি দেখেছে বিপিএলের দর্শকরা। যেটি আজ (২৪ ডিসেম্বর) হাঁকিয়েছেন ডেভিড মালান। রাজশাহীর বিপক্ষে ৫৪ বলে ঠিক ১০০ করে অপরাজিত থাকেন তিনি। যার মাধ্যমে তিনি এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৩০০ রান করে সেরা রান সংগ্রাহক হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে দলের জয়ে অবদান রাখতে না পারার খেদ থেকেই যাচ্ছে। কেননা আফিফের ঝড়ো ৭৬ রানের ইনিংসের কল্যাণে ৮ উইকেটের জয় পায় রাজশাহী।
অন্যদিকে, মুশফিকের ওই ইনিংসে খুলনার প্রধান কোচ জেমস ফস্টার এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি তাকে তার অসাধারণ সব স্ট্রোকের জন্য "৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার" উপাধিতে ভূষিত করেন। আসলে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলারদের জন্য যা তাকে বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা হলো- তার রিভার্স ও স্কুপ শট খেলতে পারার দক্ষতা। যার মধ্যে অনেকগুলোই ছক্কায় পরিণত হয়। তবে পরের ম্যাচে মুশফিকের জিরো ডিগ্রী হতেও সময় লাগেনি!
তবে ঢাকার তরুণ অলরাউণ্ডার মেহেদী হাসান তার গত দুই ম্যাচে ওয়ান ডাউনে নেমে ঝড়ো টানা দুই ফিফটি হাঁকিয়ে ইতিমধ্যেই লাইমলাইটে চলে এসছেন। যার প্রথমটি ২৩ বলে এবং পরেরটি আজ ২৪ বলে পূরণ করেন মেহেদী। বল হাতেই সমান কার্যকর এই স্পিনার।
সেরা বোলার
গত দুই সপ্তাহের সেরা বোলার খুঁজতে গেলে এক কথায় চলে আসবে মেহেদী হাসান রানার কথা। বাঁহাতি এই দ্রুতগতির বোলার পাঁচ ম্যাচ খেলেই ১৩টি উইকেট নিয়ে শিকারীদের তালিকায় রয়েছেন শীর্ষে। ৯.৪৬ গড়ে এবং প্রতি নয় বলে একটি উইকেটের স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে বল করেছেন তিনি।
চাঁদপুরের এই তরুণ যদি টুর্নামেন্টের বাকি অংশের জন্য ফিট থাকেন, তাহলে এবারের বিপিএলই হতে পারে রানার সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারের জন্য বড় একটি উপলক্ষ্য। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ছোট তারকা হওয়া সত্ত্বেও ঘরোয়া সার্কিটে একজন অচেনা-অজানা হিসাবেই কয়েক বছর অতিবাহিত করেন রানা।
অন্যদিকে, রানার এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স বিসিবির পেস বোলিং কোচদের জন্যও আনন্দদায়ক হতে পারে, যারা মানসম্পন্ন ফাস্ট বোলার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যদিও এমন অনেকেই বাংলাদেশের পিচের প্রকৃতির কারণে বেঞ্চে সময় কাটাচ্ছেন বলে মনে করা হয়।
এনএস/