ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ নেয়া মমতাজ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিতে পারলেও স্বামী মৃত হেকমত আলী শেখকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং শরণার্থী শিবিরে অসহায়দের নৌকায় পৌঁছানো ও খাবার সরবরাহে ভূমিকা পালন করেছিলেন মোছা. মমতাজ বেগম। তিনি সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী। কিন্তু এখন এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। যথাযথ চিকিৎসায় তার ব্যয় মেটানোর জন্য পরিবারেই নেই সামর্থ্য।

পারিবারিকভাবে হতদরিদ্র এই মানুষটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতিলে এসে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করতে আশীর্বাদ করেছিলেন। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করেন তিনি। এরপর মমতাজ বেগম আওয়ামী লীগের স্বপক্ষে আন্দোলন সংগ্রামে তিনিই দুঃসময়ে রেখেছেন ভূমিকা। অথচ তার দুঃসময়ে চিকিৎসা নিতে প্রয়োজন আড়াই লাখ টাকা। চিকিৎসা ব্যয় কিভাবে মিটবে এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় তার পরিবার।

যখন পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হতে স্বোচ্ছার পুরো বাঙালী জাতি, ঠিক তখন দেশ মাতৃকায় উদ্ভুদ্ধ করতে সিরাজগঞ্জের সমৃদ্ধ মালিপাড়াসহ আশপাশ সফরে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বেতিল-খামারগ্রার রাস্তায় জিব গাড়ি থেকে তিনি নামা মাত্রই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেয়ারাসহ কদ্দুস শেখ, আবুল কাশেম মাল, ছাত্তার খলিফা, প্রয়াত গাজী মোজাম্মেল হক, কাসেম মন্ডল, কালু মির্জা, হেকমত আলী শেখ, মমতাজ বেগম স্বাগত জানায়। তখন নারী মমতাজ বেগমের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে অবাক হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন তাকে আশীর্বাদ করে দেশ স্বাধীনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কালু মির্জা, হেকমত আলী শেখ, মমতাজ বেগমসহ অন্যান্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে উৎসাহিত ও তাদেরসহ শরণার্থীদের ভারতের উদ্দেশে নৌকায় কুড়িগ্রামের মানিকারচর পৌঁছে দেয়। তাদের মধ্যে নিজারা খাবার সরবরাহে যুক্ত ছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে চৌহালী উপজেলায় প্রথম মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে মমতাজ বেগম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভানেত্রী হিসেবে বিজয়ী হন। এরপর ২০০৩ সালের দিকে এনায়েতপুর থানা মহিলা লীগের আলাদা কমিটি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে নারীরাও যে ভুমিকা পালন করতে পারে বিচক্ষণতার মাধ্যমে এই অঞ্চলে তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। মিছিল, আন্দোলন, সংগ্রামে নারীদের নিয়ে ছিল তার সবর উপস্থিতি প্রথম কাতারে।

এরপর ২০১৬ সালে তার স্বামী হেকমত আলী শেখের মৃত্যুর পর ৬৮ বছর বয়স্কা মমতাজ বেগমও নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ৬ ছেলে ৩ মেয়েরা সবাই কৃষি ও তাঁত শ্রমিকের পেশার উপর নির্ভর। টানা পোড়েনের সংসারে অসুস্থ্য মায়ের দীর্ঘ দিন ধরে সম্মিলিতভাবে তারা চিকিৎসা চালিয়ে আসছিল। হঠাৎ গত গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে স্টোক করলে তাকে জরুরিভাবে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাথার রক্ত নালী ছিড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা সংকটনাপন্ন। বর্তমানে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য লাগবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে মমতাজ বেগমের ছেলে দিন মজুর সাইদুল ইসলাম ও থানা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাফিজ জানান, আমার মা ও বাবা আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ কর্মী। তারা সম্পদ বিক্রি করে মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা ও আওয়ামী লীগের কাজে ব্যয় করেছেন। যে কোনও আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা পালন করলেও টাকার অভাবে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না আমাদের মা। এলাকার এমপি মমিন মন্ডলের কাছে আমার মা চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে আবেদন করলেও কোনও সহায়তা পায়নি। এমনকি সহানুভতিও প্রকাশ করেনি। কেউ হাসপাতালে দেখতে যাওয়া তো দূরের কথা খোঁজ খবরও নেয়নি। আমাদের শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী। দয়া করে তিনি আমার মায়ের প্রতি সদয় থাকবেন।

একে//