এনআরসির প্রভাব পড়েনি বেনাপোলে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার
এনআরসি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যে উত্তেজনা চললেও এর প্রভাব পড়েনি যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারে। এই রুটে যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
ডিসেম্বরে ভারতে যাওয়া পাসপোর্টযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া ডিসেম্বর মাস হওয়ায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে অনেকে বেড়াতে ভারত যাচ্ছেন।
সম্প্রতি ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ায় ভারতের দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে মানুষ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ অনেক স্থানে সহিংসতায় রূপ নেয়, বিক্ষোভকারীরা অনেক স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলে এবং ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেক স্থানে ট্রেন চলাচল বন্ধ ও বাতিল করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চলাচল কমলেও বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে ভারতে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা, ব্যবসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে ভারতে যাওয়া যাত্রীরা।
১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে দায়িত্বে রয়েছে পুলিশসহ কয়েকটি নিরাপত্তা বাহিনী। সকাল ৬.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায় যাত্রীদের। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারত গেছেন ৫৯ হাজার ৮৯৪ জন পাসপোর্টধারীযাত্রী। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ৫৬ হাজার ৩৬৫ জন। মোট এক লাখ ১৬ হাজার ২৫৯ জন পাসপোর্টধারী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করেছেন।
ভারতের ব্যাঙ্গালুর থেকে ফিরে আসা ঢাকার সিদ্দিকুর রহমান জানান,‘আমরা চিকিৎসার জন্যে ভারতের ব্যাঙ্গালুরে গিয়েছিলাম বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবহার করে। যেতে সমস্যা হয়নি। তবে ফেরার পথে সেখানকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের কারণে সড়ক পথে যানবাহন বন্ধ ছিল। ফলে অধিক যাত্রীর চাপ সৃষ্টি হয় বিমানবন্দরে। এ কারণে বিমানের ফেরার টিকিট আমাদের দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। বিমানে কলকাতায় এসে সড়ক পথে বেনাপোল দিয়ে ফিরতে কোনও সমস্যা হয়নি।’
ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা চাঁদপুরের সুবল সরকার বলেন, ‘আমি ভারতের চেন্নাইতে আমার চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার কারণে অনেক রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে আমাদের দেশে ফিরতে সমস্যার পড়তে হয়েছে। এ কারণে বিমানে করে বেশি ভাড়া দিয়ে কলকাতা হয়ে সেখান থেকে বাসে দেশে ফিরে এসেছি।’
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়শনের চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল জানান,‘ভারতে এনআরসি‘র কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পর্যটকসহ বিভিন্ন ধরনের যাত্রী পারাপারসহ বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের মালামাল আনা-নেওয়ায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না’।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম জানান, ভারতে এনআরসির কারণে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। এই এলাকার অধিংকাশ মানুষ কলকাতায় চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য গিয়ে থাকেন। অনেকের সীমান্তের ওপাশে আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। অধিকাংশ স্কুল-কলেজের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কারণে অনেকে তাদের কোলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছেন। যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সেলিম রেজা জানান, ভারতে এনআরসির কোনও প্রভাব সীমান্তে নেই। প্রভাব থাকলে অনুপ্রবেশ বাড়তো। বর্তমানে সীমান্তে কোনও অনুপ্রবেশ নেই। তারপরও বিজিবি সদস্যরা সর্বদা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানান, যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের এনআরসির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ পোর্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
কেআই/এসি