যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ছাড়িয়েছে গণহারে হত্যার ঘটনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০১:০৯ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার
যেকোন বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ম্যাস কিলিং বা গণহারে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে মোট ৪১টি গণহারে হত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে যাতে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২১১ জন।
অ্যাসোসিয়েট প্রেস-এপি, ইউএসএ টুডে এবং নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে গবেষকদের যে তথ্যভাণ্ডার জোগাড় করেছে তাতে এ চিত্র উঠে এসেছে বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
গণহারে হত্যা বলতে, যে হামলার ঘটনায় হামলাকারী ব্যতীত চার বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষ মারা গেছে সেসব ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে।
২০১৯ সালে যেসব ঘটনা সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী ছিল সেগুলো হচ্ছে, গত মে মাসে ভার্জিনিয়া সৈকতে হামলায় ১২ জন এবং আগস্টে এল পাসোতে হামলায় ২২ জনের মৃত্যু।
চলতি বছর ৪১টি ঘটনার মধ্যে ৩৩টিতে আগ্নেয়াস্ত্র জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। স্টেট এর ভিত্তিতে দেখলে সবচেয়ে বেশি গণহারে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। মোট আটটি ঘটনা ঘটেছে সেখানে।
বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে হত্যার ঘটনা পর্যায়ক্রমে শনাক্ত করে এই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে। তবে ১৯৭০ এর দশকের কোনো গবেষণাতেও এতো বেশি গণহারে হত্যার ঘটনা সম্বলিত কোনো বছরের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গণহারে হত্যার ঘটনা- মোট ৩৮টি ঘটেছিল ২০০৬ সালে। তবে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটলেও এ ধরণের হামলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল ২০১৭ সালে।
চলতি বছর ২১১ জন মারা গেলেও ওই বছর বিভিন্ন ঘটনায় ২২৪ জন মানুষ মারা যায়। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গুলির ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছিল। লাস ভেগাসে একটি উৎসবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ৫৯ জনকে।
গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক গণহারে হত্যার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয় না। কারণ ওই সব ঘটনায় পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদক ব্যবসা বা গ্যাং সহিংসতা জড়িত থাকে এবং এগুলো জনসমক্ষে ঘটে না।
যুক্তরাষ্ট্রে মোট হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমলেও গণহারে হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে, বলেন মিনেসোটার মেট্রোপলিটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক জেমস ডেনসলি। তার মতে, হত্যাকাণ্ডের শতকরা হার হিসেবে এই গণহারে হত্যার ঘটনাগুলো বেশি হারে প্রাণহানির জন্য দায়ী।
অধ্যাপক ডেনসলি বলেন, মার্কিন সমাজের ক্রোধ এবং হতাশার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে হঠাৎ করে এ ধরণের ঘটনার বৃদ্ধি। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, অপরাধের প্রবণতা হচ্ছে ঢেউয়ের মতো করে একটার প্রভাবে আরেকটা ঘটতে থাকা। এই সময়টা হচ্ছে গণহারে গুলির ঘটনার সময়।
মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বন্দুকের মালিকানার অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং গণহারে গুলির ঘটনা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সংস্কার আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আইন-প্রণেতাদের তেমন প্রভাবিত করেনি।
গত আগস্টে ডেটন, ওহাইয়ো এবং টেক্সাসের এল পাসোতে প্রাণঘাতী হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের ‘অর্থবহভাবে’ অতীত অনুসন্ধান করে দেখার বিষয়ে কংগ্রেস নেতাদের সাথে জরুরি আলোচনা হবে।
কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে থাকা প্রভাবশালী লবি গ্রুপ- ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী ওয়েনি লা পিয়েরের সাথে লম্বা ফোনালাপের পর ওই প্রতিশ্রুতি থেকে চুপচাপ সরে এসেছিলেন ট্রাম্প।
ফোনালাপের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে খুব কঠোরভাবে অতীত অনুসন্ধান করে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। গণহারে গুলির ঘটনা এক ধরণের মানসিক সমস্যা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে, স্যান্ডি হুক স্কুলে গুলির ঘটনার ৭ম স্মরণানুষ্ঠানের সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়নে আবারো আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তার পরিকল্পনায় আগ্নেয়াস্ত্র এবং হামলার উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞাসহ সব ধরণের বন্দুক বিক্রির সময় ক্রেতাদের অতীত সম্পর্কে অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।
আরেক ডেমোক্রেট মনোনয়ন প্রত্যাশী এলিজাবেথ ওয়ারেন চলতি বছরের শুরুর দিকে তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যেখানে গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৮০ ভাগ কমিয়ে আনতে নীতিমালা এবং নির্বাহী পদক্ষেপ যৌথভাবে গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
মিজ ওয়ারেন অতীত বিষয়ে কঠোর অনুসন্ধান ছাড়াও আইন ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিলের সক্ষমতা থাকারও প্রস্তাব করেন।
এআই/