ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

মিরাজের বিস্ফোরক ইনিংসের রহস্য ফাঁস!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪২ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার

মেহেদি হাসান মিরাজের ফিফটি উদযাপন

মেহেদি হাসান মিরাজের ফিফটি উদযাপন

“বিগ হিট” খেলার সামর্থ্য নেই, কিংবা স্ট্রাইক রোটেড করে খেলতে পারেন না! মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে এমন অভিযোগ শোনা গেছে প্রায়শ। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে আগের ম্যাচেই সে অভিযোগের জবাব দেয়ার আভাস মিলেছিল। যদিও অল্পতেই থেমে গেছে মিরাজ ঝড়। 

কিন্তু খুব বেশি সময় নেননি তরুণ এই টাইগার। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে ঠিকই তাণ্ডব দেখালেন এই অলরাউন্ডার।

সিলেট থান্ডারের বিপক্ষে ব্যাট হাতে রিতিমত তাণ্ডবই চালিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের নতুন ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজ-ঝড়ে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গেল সিলেট থান্ডার। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে সুরমা পারের দলটিকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। 

আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে চার উইকেটে ১৫৭ রানের লড়াকু পুঁজি তোলে সিলেট। জবাব দিতে নেমে খুলনা জিতেছে ১৩ বল হাতে রেখেই। ৬২ বলে ৩ ছক্কা এবং ৯ চারে অপরাজিত ৮৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে দলকে ৮ উইকেটের বড় জয় এনে দেন মিরাজ। অসাধারণ এ ব্যাটিংয়ের পর রীতিমত প্রশংসায় ভাসছেন তরুণ টাইগার।

ম্যাচ শেষে এ বিধ্বংসী ইনিংসের রহস্য খোলাসা করেন মিরাজ। তার মতে, পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং করার সুবিধাটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পারাতেই সাফল্য ধরা দিয়েছে।

মিরাজ বলেন, পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং করলে আমি টাইমিং করে খেলতে পছন্দ করি। এটা কাজে দিয়েছে। এসময় গ্যাপ বের করতে পারলেই চার হয়ে যায়। এদিন সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে। আমার খেলার ধরন অনুযায়ী, ওপরে ব্যাটিং করলে সুবিধা বেশি থাকে। সার্কেল পার করলেই বেশি রান আসে।

ওপেনিং করাটা মিরাজের জন্য নতুন কিছু নয়। গত বিশ্বকাপেই হঠাৎ করে তাকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেন মাশরাফি। সফলও হন তাতে। অবশ্য বিপিএলে আগের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ভালো করতে পারেননি মিরাজ। আউট হয়েছেন যথাক্রমে ০ এবং ১২ রান করে। তবু ওপেনিংয়ে তার প্রতি আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দিতে পারায় খুশি মেহেদী মিরাজ।

আর সেজন্য খুলনা টিম ম্যানেজমেন্টকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও দেরি করেননি মিরাজ। ২২ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বলেন, এজন্য আমি টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা আমাকে ওপেনিংয়ে খেলাতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। কারণ, আমার ব্যাটিংয়ের ধরনটাই শুরুর জন্য উপযুক্ত। তবে প্রথম দুই ম্যাচ ভালো হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে এদিন (শনিবার) অনেক ভালো হয়েছে।

টাইগার এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার বলেন, তারা যে আমার ওপর ভরসা রেখেছে, এটা দারুণ লেগেছে। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি পারব। কারণ, পাওয়ার প্লে-তে টাইমিংটাই দরকার। স্লগ ওভারে যেটা কার্যকরী নয়। সেখানে জোরে হিট করতে হয়। এসময় আমার কাছে ১৫ বলে ৩০/৩৫ রান চাইলেও হয়তো পারব না। 

লোয়ার অর্ডার থেকে টপ অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে শুধু যে মেহেদী মিরাজই সাফল্য পেয়েছেন তা নয়, এই দলে আরও আছেন কয়েকজন। তবে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনিও এক মেহেদী! কি, চিনতে পারলেন না! 

বলছিলাম ঢাকার তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানের কথা। মূলত অফ স্পিনার। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটটাও যে ভালো ব্যবহার করতে পারেন, তা দেখা গেছে এবারের বিপিএলেই। চট্টগ্রামের মাটিতে ঢাকা যে দুটি ম্যাচে জয় পেয়েছে, দুটিতেই ছিল মেহদীর অবদান। তার ঝড়ো ব্যাটেই মূলত জয় পেয়েছে ঢাকা। 

পরপর দুই ম্যাচেই যথাক্রমে ২৩ ও ২৪ বলে ফিফটি হাঁকান মেহেদী। বল হাতেই ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তবে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করা মেহেদীকে ওপেনিংয়ে নয়, ওয়ান ডাউনে নামিয়ে দিয়ে এই সাফল্য পান মাশরাফি।

এখানেই শেষ নয়, এই দুই মেহেদী ছাড়াও এবারের বিপিএলে দেখা গেছে আরেক মেহদীর উত্থান। তবে তিনি এ দুজনের মতো ব্যাটসম্যান নন।বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা। চাঁদপুরের এই তরুণ চলতি বিপিএলে চট্টগ্রামের হয়ে দারুণ সব চমক দেখিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩টি উইকেট শিকার করে শিকারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন শীর্ষেই।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এবারের বিপিএল যেন মেহেদীময় রঙিন। জয় হোক মেহেদীদের। জয় হোক ক্রিকেটের, জয় হোক বাংলাদেশের।  

এনএস/