হাশদ আশ-শাবি’র ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানোর ৪ কারণ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১২ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আল-আনবার প্রদেশের আল-কায়েম শহরে অবস্থিত জনপ্রিয় আধাসামরিক বাহিনী হাশদ আশ-শাবি’র সামরিক ঘাঁটিতে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনারা। এ হামলায় হাশদ আশ-শাবি’র বহু সংখ্যক সেনা সদস্য হতাহত হয়েছেন।
হাশদ আশ-শাবি’র সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন হামলার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা ইরাকের এ জনপ্রিয় বাহিনীকে লুটেরা, দুর্নীতিপরায়ন ও সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাশদ আশ-শাবি’র অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং কয়েক দফা তাদের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। এ অবস্থায় ইরাকের এ জনপ্রিয় বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এত ক্ষোভ ও শত্রুতার কারণ কি সেটাই বড় প্রশ্ন।
এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে বলা যায়, ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও হাশদ আশ-শাবি’র বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। হাশদ আশ-শাবি এমন একটি আধা সামরিক বাহিনী যা জনগণের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গঠিত হয়েছে যারা এ অঞ্চলে আইএসসহ বিদেশি শক্তির আধিপত্যের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এটাই তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভ ও শত্রুতার প্রধান কারণ।
প্রতিরোধ বাহিনী হাশদ আশ-শাবি ইরাকসহ এ অঞ্চলে মার্কিন হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধী। আল-কায়েম শহরে অবস্থিত হাশদ আশ-শাবি বাহিনীর ঘাঁটিগুলো মার্কিন সামরিক ঘাঁটির খুব কাছেই অবস্থিত এবং এখান থেকে তারা ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের চলাচলের ওপর ভালভাবে নজরদারি করে থাকে। এমনকি তারা চাইলে মার্কিন সেনাদের জন্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে মার্কিন সেনারা সবসময় আতঙ্কে থাকে। ইরাকের হাশদ আশ-শাবি হচ্ছে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী সংগঠন। এটাও যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ের অন্যতম কারণ। হাশদ আশ-শাবি’র ঘাঁটিতে হামলার পরপরই মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে হাশদ আশ-শাবি হচ্ছে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষাকারী ইরাকের হিজবুল্লাহ।
হাশদ আশ-শাবি’র প্রতি মার্কিন শত্রুতার দ্বিতীয় বড় কারণ হচ্ছে, দখলদার ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা। কারণ হাশদ আশ-শাবি লেবাননের হিজবুল্লাহর মতোই আরেকটি শক্তিশালী সংগঠন যারা কি না পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াসরা কাতেজ ইরাকে হাশদ আশ-শাবি’র ঘাঁটিতে মার্কিন হামলাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
হাশদ আশ-শাবি’র প্রতি মার্কিন ক্ষোভ ও শত্রুতার তৃতীয় বড় কারণ হচ্ছে, ইরাকের শাসন ক্ষমতায় এ সংগঠনের প্রভাব বিস্তার ঠেকানো। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ছাড়াও সৌদি আরবও হাশদ আশ-শাবি’র তীব্র বিরোধী। ইরাকের জনপ্রিয় এ সংগঠনটি আরব বিশ্বের অন্যতম বড় ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় এখন লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সংগঠনের মতোই হাশদ আশ-শাবিকেও ভয় পাচ্ছে সৌদি আরব। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবেই হোক সৌদি সরকারের নীতি বিরোধী ইরাকের হাশদ আশ-শাবিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
হাশদ আশ-শাবি’র প্রতি মার্কিন ক্ষোভ ও শত্রুতার চতুর্থ বড় কারণ হচ্ছে, উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই সংগঠনটির বিরাট অবদান। যুক্তরাষ্ট্র আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাতো নেয়নি বরং বর্তমানে এই সন্ত্রাসীদেরকে সিরিয়া থেকে ইরাকে প্রেরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র হাশদ আশ-শাবি’র যেসব ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তার খুব কাছেই আইএস সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হত এবং সে এলাকা দিয়ে ইরাকে প্রবেশ করত। এ কারণে সেখানে হাশদ আশ-শাবির এই ঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও আইএস সন্ত্রাসীদের জন্য বিরক্তের কারণ।
যাইহোক, এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র হাশদ আশ-শাবি’র বিরুদ্ধে বড় ধরণের সামরিক হামলা চালিয়েছে। এ অবস্থায় হাশদ আশ-শাবি এখন কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র: পার্সটুডে
একে//