সিটি নির্বাচন
ইভিএম’র জন্য অতিরিক্ত ৩৪ কোটি টাকা চেয়েছে ইসি
আসিফ শওকত কল্লোল
প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ১ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের শূন্য আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাজেটের ইভিএম এর ব্যবহারের প্রশিক্ষনের জন্য ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো ইসির উপসচিব মো. আব্দুল মমিন সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠি এ অতিরিক্ত অর্থ চায় ইসি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে ইভিএম- এর প্রশিক্ষণের জন্য এমনতেই বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অর্থ বছরের ছয় মাস না যেতেই অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া বাজেটের ওপর একধরনের চাপ তৈরি করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, অর্থ বিভাগ জেনেশুনেই কেন ইসি- এর প্রশিক্ষনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ছাড় করবে। সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সরকার অতিরিক্ত অর্থ ছাড় করার কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না।
সূত্র আরও জানায়, চলতি বাজেটে এখন পর্যন্ত রাজস্ব কাঙ্খিত হারে অর্জন হয়নি। ব্যয় মেটাতে গিয়ে সরকার বেশি মাত্রায় ব্যাংক ঋণ করছে। যে কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছর ৭৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণের কথা।
ইসির চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের সিটি করপোরেশন এবং সাধারণ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন ইভিএম- এর সম্পন্ন প্রশিক্ষণের জন্য চার ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে- ই-ফাইলিং, ভিডিও মডিউল ও নতুন বাজেট ও নতুন বাজেট ও হিসাবরক্ষণ শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি প্রশিক্ষণসহ আরও কয়েক ধরনের প্রশিক্ষণ উপলক্ষ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশন- এর প্রশিক্ষণ খাতে জুন ২০২০ মাস পর্যন্ত ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত ৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাজেট সংস্থান প্রয়োজন হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জাতীয় সংসদের শূন্য আসনে উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকারের কয়েকটি স্তরের নির্বাচনি প্রশিক্ষণসহ ১৫ ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য জানুয়ারী ২০২০ মাস হতে ৩১ র্মাচ ২০২০ পর্ষন্ত সময়ের জন্য বাজেটে সংস্থানকৃত ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। চিঠিতে আরও উল্লেখ্য করা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা ইভিএমএর প্রশিক্ষণ বেশি অর্থ প্রয়োজন রয়েছে তার পরিমাণ হচ্ছে- ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এ অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মাঠ পর্যায়ে ই-ফাইলিং বিষয় প্রশিক্ষণ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিকস, নিপ্রই ও মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অফিস ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ বাবদ রাখা হচ্ছে দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এদিকে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে অনড় হয়ে ইসি অবস্থানে রয়েছে। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এই ভোটযুদ্ধে অংশ নিলেও শুরু থেকেই ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছে দেশের প্রধান রিরোধীদল বিএনপি। এরই মধ্যে ইসি কর্মকর্তা সাইদুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ১৫ হাজার ভোট কক্ষে ব্যবহারের জন্য ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
একইদিন ‘ইভিএমে বিশ্বাসযোগ্য ফল পাওয়া অসম্ভব’ দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে সরকারের কারসাজি করার ইচ্ছা পূরণেই ইসি ইভিএম ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
এর আগে ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার দিনই দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। পরে ২৫ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে তিনি বলেন, সবাই যদি বলে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না, তাহলে সেটা করব না।
৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ডিএনসিসিতে আসন্ন নির্বাচনে এক হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের সাত হাজার ৫১৬টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
আর ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ডিএসসিসির এক হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের পাঁচ হাজার ৯৯৮টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। সেখানে মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন ভোটার রয়েছেন।
তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার, যা যাচাই-বাছাই করা হবে ২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি।
একে//