চট্টগ্রামে চলবে এস আলম গ্রুপের ২০০ নতুন বাস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০০ এএম, ২ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের নজর এখন চট্টগ্রামের পরিবহন খাতে। এ খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগে আগ্রহী এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। নগরীর গণপরিবহনের সংকট ও যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ কমাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে ২০০ নতুন বাস পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে গ্রুপটি। প্রতিটি ৩২ আসনের বাস মহানগরীর তিন রুটে ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় রুটে চলাচল করবে। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুই রুটে নতুন বাস চালুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে নতুন বছরের শুরু থেকে মহানগর রুটে বাস চলাচল শুরু হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর তিন রুটে ১০০ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় রুটে ১০০ নন-এসি বাস নামাচ্ছে এস আলম গ্রুপ। এ খাতে শিল্পগ্রুপটি বিনিয়োগ করবে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগরীর তিন প্রধান রুট কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, লালদীঘি থেকে ভাটিয়ারী এবং নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটে চলাচল করবে ১০০ এসি বাস। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
অপরদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় রুটে ১০০ নন-এসি বাস নামাবে গ্রুপটি। এ রুটে গ্রুপটির ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে পাঁচ কোটি। ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি অশোক লেল্যান্ড থেকে এসব বাস সরবরাহ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি বাসগুলোর চেসিস সরবরাহ করবে। আর বডি প্রস্তুত হবে দেশেই। এরই মধ্যে বাসগুলো সরবরাহ করতে কার্যাদেশ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বিআরটিএ’র রোড পারমিট ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অনুমোদন পেলে আগামী মাস থেকে মহানগর রুটে বাসগুলো চলাচল শুরু হবে।
অপরদিকে চলতি মাসের মধ্যে সিনেমা প্যালেস-পেকুয়া-মগনামা-মহেশখালী ও সিনেমা প্যালেস-পটিয়া অর্থাৎ দক্ষিণ চট্টগ্রাম রুটে প্রথম ৪০টি বাস চালু হওয়ার কথা রয়েছে। রাস্তায় নামানোর জন্য গাড়িগুলো প্রস্তুত রয়েছে বলে এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম-বাঁশখালী, চট্টগ্রাম-সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া ও চট্টগ্রাম-চকোরিয়া রুটে বাস সার্ভিস চালু হবে।
এস আলম গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে থেকে এস আলম গ্রুপের পরিবহন খাতে বিনিয়োগ ছিল। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে এসব বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে গ্রুপটি। এ খাতে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর এতে প্রায় ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, সিটি মেয়র তাদের (এস আলম গ্রুপ) অনুরোধ করেছিলেন, তারাই গাড়ি নামাচ্ছে। এটা আমরা অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে এটি বিরাট ভূমিকা রাখবে। শহর এলাকায় বাসে অনিয়ম, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, যেখানে-সেখানে দাঁড়ানো কমবে এবং যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলায় গাড়িগুলো চলবে। এ বাসগুলো চালু হলে যারা দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহনে অনিয়মের শিকার হতেন, এখন তারা পরিত্রাণ পাবেন।
এ ব্যাপারে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সিটি করপোরেশনের কিছু নেই এতে। এস আলম গ্রুপকে নগরীতে বাস নামানোর জন্য আমি অনুরোধ করেছিলাম, তারা রাজি হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা এটি। সবই এস আলম গ্রুপের। আমরা শুধু সহযোগিতা করছি। আমরা চাচ্ছি শহরটা সুন্দর হোক।
উল্লেখ্য, শিল্পোদ্যোক্তা সাইফুল আলম প্রায় ৩০ বছর আগে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্য বেচাকেনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পাঁচ ভাই মিলে এস আলম গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা কিনে নিয়ে রীতিমত দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে আসে গ্রুপটি। সময়ের সঙ্গে ব্যবসার পরিসর বাড়তে থাকে তাদের। একে একে পরিবহন, হোটেল, ঢেউটিন, সয়াবিন তেল, সিমেন্ট, চিনি, সিআর কয়েলসহ বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটি কয়েক বছর আগেও তেল, গম, চিনি আমদানিতে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে কিছুটা সরে এসে জ্বালানি, সিমেন্ট, ইস্পাত, ঢেউটিন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এসব ব্যাংক ছাড়াও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ক্যাপিট্যাল ও ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিসেস, নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিকানা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
আরকে//