ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ওরশ শুরু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ৩ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা, আধ্যত্মিক সাধক, ওলিয়ে-কামেল হযরত শাহ্ সুফি খাজা বাবা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ)-এর ২০২০ সালের বাৎসরিক ওরশ আজ শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে। 

ঐতিহ্যের ১০৫ তম এই বাৎসরিক ওরশ উপলক্ষে সকালে মাজার জিয়ারত, আরবি হরফে আল্লাহ আকবার লেখা লাল নিশান গদ্দিনশীন পীর হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার হাত ধরে সু-উচ্চ খুটিতে উড়িয়ে ৩ দিনের কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য গত ২ মাস আগে থেকেই নেয়া সব রকম প্রস্তুতি সপ্তাহ খানেক আগেই শেষ হয়েছে। 

বর্তমানে ওরশে দু দিন আগে থেকেই সাড়া দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ভারতের আসাম থেকে উপস্থিত হচ্ছেন হাজার-হাজার জাকেরগন। দেশের বৃহৎ ধর্মীয় এই মহাসমাবেশ সফল করতে জেলা প্রশাসন নিরাপত্তায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ আগত লাখ-লাখ ভক্ত এবং সকল অতিথিদের থাকা-খাওয়া ও ওজু গোসলের জন্য গ্রহন করেছে বিশেষ ব্যবস্থা। 

এছাড়া ওরশ উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারো যমুনার তীর ঘেষে বইছে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী মেলা। এদিকে বাৎসরিক এ ঐতিহ্যের ওরশ উপলক্ষে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এনায়েতপুর থানার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ অসম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি বাড়িতে-বাড়িতে নায়রে ঝি-বেটিদের এনে নবান্নের পিঠা-পুলির প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জানা যায়, আধ্যাত্বিক সুফী সাধক হযরত খাজা বাবা ইউনুছ আলী (রঃ) মুলত ছিলেন ইয়েমেনের বংশধর। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারের জন্যই তাদের আগমন ঘঠে। তার পঞ্চম পুর্ব পুরুষ হযরত শাহ দায়েম (রঃ) ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন। খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর বাবা শাহ আব্দুল করিম (রঃ), মাতা-তামান্না বেগম (রঃ) এর ২ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তিনি ১৮৮৬ সালের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। ছোট বেলা থেকেই ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সাথে জড়িত থেকে সুফীবাদের দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। এ কারনে অবিভক্ত ভারত-বাংলার অন্যতম ধর্ম প্রচারক তৎকালীন কোলকাতার মেহেদীবাগ দরবার শরীফের পীর আওলাদে রসুল খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে চলে আসেন। তার আদর্শিক কর্মকাণ্ড এবং মানুষের প্রতি অঘাত ভালবাসা, নির্লোভ নানা গুণের কারণে খুব স্বল্প সময়ে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) গুরু খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর তরিকা লাভ করেন। 

এরপর ১৯১৬ সালে প্রথমবার তৎকালীন দরবার শরীফের গদ্দিনশীন হুজুর পাক হযরত খাজা বাবা ইউনুছ আলী (রঃ) তার কয়েকজন ভক্তদের সাথে স্বল্প পরিসরে কয়েকশ অনুসারী নিয়ে এনায়েতপুরে শুরু করা হয় বাৎসরিক ওরশ। এরপর থেকেই এই ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিগত বছরের ন্যায় এবার ওরশ উপলক্ষে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কে করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও দরবারে প্রবেশ মুখে ৩ কিলোমটার জুড়ে আলোকসজ্জা। ওজু-গোসলের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, খাবার মাঠ সংস্কার, লাখ-লাখ নারী-পুরুষ জাকেরদের থাকা-খাওয়ার আলাদা ব্যবস্থা। এখানে ৩ দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টাই খাবারের আয়োজনে ৫ শতাধিক বাবুর্চি স্বেচ্ছাশ্রমে রান্নার কাজে নিয়োজিত থাকবে। খাবার পরিবেশনে অর্ধ লক্ষাধিক মাটির থালার সানকি রাখা হয়েছে প্রস্তুত।

আশা প্রকাশ করা হচ্ছে, এবছর রেকর্ড সংখ্যক ভক্তদের আগমন ঘটবে এই ওরশ শরীফে। এ ব্যাপারে মাজার শরীফ কর্তৃপক্ষের আলহাজ্ব হামিদুল হক, আলহাজ্ব মাওঃ আব্দুল আওয়াল, মুরাদ আহমেদ খান, মাহফুজুর রহমান (বাবলু), আনছার কমান্ডার আনিছুর রহমান ও লিটন সরকার জানান, হঠাৎ করে শীত বাড়লেও তা অলৌকিক ভাবে কমাতে জাকেরদের আগমন বেশী হবে। তাতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক ভক্তবৃদ্ধের আগমন ঘঠবে। যাদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আশা করছি, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভে ইসলামের দাওয়াত প্রচারের এবারের আয়োজন সবারই দৃষ্টি কারবে।

এদিকে আগামী ৫ জানুয়ারি রোববার সকাল ৯টায় আখেরী মোনাজাতে দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দিনিশীন হুজুর পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার আখেরি মোনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করে এই ধর্মীয় মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘটবে।    

উল্লেখ্য, বর্তমানে খাজা ইউনুছ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে এসে এবং অনুগত অনুসারী হয়ে দেশ তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত ও শান্তি স্থাপনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন ভারতের আসামের মেহেদীবাগ দরবারের পীর, ফরিদপুরের প্রখ্যাত আটরশি, চন্দ্র পাড়ার পীর, টাঙ্গাইলের প্যারাডাইস পাড়া, ময়মনসিংহের সম্ভুগঞ্জের পীরসহ ১২শ পীর-আউলিয়া। খাজা বাবা ইউনুছ আলী (রঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন পরলোকগমন করেন। ইসলাম প্রচার ও দর্শনে বিশেষ গুণের পাশাপাশি মানবিকতায় অবদান থাকার কারণে তার ভারত-বাংলায় অন্তত কোটি মানুষ ভক্ত রয়েছে।