ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

দারিদ্রতাকে হার মানালো জিপিএ-৫ পাওয়া আরাফাত 

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

আরাফাত হোসেন। ভ্যান চালকের ছেলে। ভ্যান চালক পিতার স্বপ্ন লেখাপড়া করে ছেলেকে চিকিৎসক হয়ে গরীব দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণে ছেলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবারের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে পরিবারের দারিদ্র্যের কাছেও পিতার স্বপ্ন পূরণে হার মানেনি আরাফাত। সে বড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরিচর্যা ও সকলের সহযোগিতা পেলে মেধাবী ছাত্র আরাফাতের সফলতা উচ্চ শিখরে নিয়ে যাবে বলে জানান স্কুলের শিক্ষকরা।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া সুলতানা জানান, বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আরাফাত। আরাফাতের ফলাফলে আমরা গর্বিত। তার পিতা পেশায় একজন দিনমজুর ভ্যান চালক। তার আয়ের উপর নির্ভর করে চলে বাবা-মা সন্তানসহ ১০ জন সদস্যের একটি পরিবার। 

আরাফাত যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের লিটন হোসেন টিটুলের ছেলে। ভিটেমাটি পাঁচ শতক জমিতে লিটন হোসেন টিটুলের পরিবারের বসবাস। আবাদ করার মত কোন জমি না থাকাই সংসার ও ছেলেদের লেখা পড়ার খরচ বহন করা তার পক্ষে অত্যন্ত কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠে। আরাফাতের ছোট ভাই রনি বড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। 
আরাফাতসহ তার ছোট ভাই ও (বিধবা ফুপুর মেয়ে) ফুপাতো বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ভ্যান চালিয়ে ও ধার-দেনা করতে হয়। আরাফাতের বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় হয় এ টাকায় কোনো রকমে সংসার চলে, পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা সকলে সহযোগিতা করলে আরাফাত দেশের গৌরব বয়ে আনবে।

আরাফাতের পিতা লিটন হোসেন টিটুল বলেন, দিনদিন দ্রব্য মূল্য যে ভাবে বাড়ছে সংসারের খরচ করে কীভাবে ওদের পড়াব এই ভেবে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখি। ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু ভ্যান চালিয়ে যে আয় হয় ভবিষ্যৎ পড়ালেখা নিয়ে খুব চিন্তা ও ভয় তাড়া করে আমাকে। নেই কলেজে যাওয়ার পরিধেয় পোশাক। এখনও জানি না ছেলের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। 

জিপিএ-৫ পাওয়া আরাফাত জানায়, বাবার স্বপ্ন অনেক বড়। চিকিৎসক হয়ে গরীব দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণে তার চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।

উলাশি টিআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমান ৪৯১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে মুখরিত। এ বছরের প্রথমে দিনে ভর্তি হয়েছে শতাধিক ছাত্র ছাত্রী। যার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির (খ) বিভাগে সমাপনিতে জিপিএ ৫ পেয়ে ভর্তি হয়েছে মেধাবী ছাত্র আরাফাত। তার বাবা একজন দিনমজুর ভ্যানচালক। হাড় ভাঙা কষ্ট করে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ বহন করছেন। প্রতিষ্ঠানের কোন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না আরাফাত। সে খুবই মেধাবী ছাত্র। লেখা পড়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বিত্তবানসহ সকলের সহযোগিতা করলে তার পরিবার ও আরাফাত ভাল করে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। 

আরকে//