ঢাকা, শুক্রবার   ১০ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৭ ১৪৩১

বাবা ভাঙা কে ছিলেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার

বাবা ভাঙ্গা ছিলেন বুলগেরিয়ার রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন নারী। তিনি ছিলেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটি নামক স্থানে। ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উসমানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র) স্ট্রোমিকাতে জন্মগ্রহণ করেন ভাঙা বাবা।

ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। সে সময়কার স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন সাথে সাথেই তার নাম রাখা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে শিশুটি বেঁচে থাকবে। যখন শিশু ভাঙ্গা কেঁদে উঠলেন তখন একজন ধাত্রী রাস্তায় বের হয়ে আসলেন এবং অপরিচিত একজন ব্যক্তির কাছে শিশুটির নাম রাখার জন্য অনুরোধ করলেন। 

অপরিচিত ব্যক্তিটি শিশুটির নাম অ্যান্ড্রোমাহা রাখার জন্য প্রস্তাব করলেন কিন্তু নামটি গ্রীক নামের সাথে অত্যধিক মিল থাকায় প্রত্যাখ্যান করা হল। দ্বিতীয় একজন অপরিচিত ব্যক্তি ভ্যানগেলিয়া নাম রাখার জন্য প্রস্তাব করলেন, যদিও এই নামটিও গ্রিক নামের সাথে মিল ছিল কিন্তু বুলগেরীয় সংস্কৃতির সাথে মিলও ছিল এবং এই নামটিই গ্রহণ করা হল। শেষ পর্যন্ত বাবা ভাঙার নাম রাখা হয় ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। বিয়ের পর তার নতুন নাম হয় ভ্যানগেলিয়া গুস্টেরোভা। 

শৈশবে ভ্যানগেলিয়া নীল চোখ ও সোনালী চুলের একজন সাধারণ মেয়ে ছিলেন ভাঙা বাবা। তার বাবা অভ্যন্তরীণ ম্যাসেডোনীয বিপ্লবী সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদান করেছিলেন। শৈশবেই তার মা মৃত্যুবরণ করায় তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তিনি তার সৎমায়ের আশ্রয়ে পালিত হন। যদিও তিনি অধিকাংশ সময় প্রতিবেশীদের সাথেই কাটাতেন। 

কথিত আছে, ছোটবেলা থেকেই তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে রোগী ও চিকিৎসক সেজে খেলা করতেন। একদিন এক ঝড় ভাঙ্গাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং একটি মাঠে নিক্ষেপ করে। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর তাকে ভয়ার্ত ও চোখে বালি ও কর্দমাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অনেক চেষ্টার পরও তিনি চোখ খুলতে পারছিলেন না এবং চোখের পুরো অংশ অপারেশনের জন্য টাকা ছিল না, এরপর তিনি অন্ধ হয়ে যান।

১৯২৫ সালে জেমুন শহরে ভাঙ্গাকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় যেখানে তাকে ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়। সেখানেই তিনি পিয়ানো বাজানো, বুনন, রান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর শিক্ষা নেন।[১০] এই বিদ্যালয়ে তিনি তিন বছর অবস্থান করেন। সে সময়ই তার সৎ মা মৃত্যুবরণ করেন এবং তিনি তার সৎ ছোট ভাইদের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে চলে যান। তার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় প্রায় সবসময়ই তাকে অন্ধ থাকার পরও পরিশ্রম করতে হতো।

১৯৩৯ সালে তিনি ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন, যদিও আগের বছরগুলোতে তার স্বাস্থ্য বেশ ভালো ছিল। সে মময় যদিও ডাক্তাররা বলেছিলেন তিনি খুব শীঘ্রই মৃত্যুবরণ করবেন কিন্তু তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। তার অলৌকিক ক্ষমতা জনপ্রিয় হতে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। সে সময় অনেকেই তার কাছে তাদের পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন কিনা এমন প্রশ্ন নিয়ে আসতে থাকে। ১৯৪২ সালের ৮ এপ্রিল বুলগেরীয় শাসক তৃতীয় বোরিস তার সাথে দেখা করার জন্য আসেন।

১৯৪২ সালের ১৯ মে তিনি দিমিতার গোসতারভ নামে একজন সৈনিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দিমিতার ছিলেন পেটরিচের নিকটবর্তী ক্রেন্দাহিলিৎসা গ্রামের বাসিন্দা যিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে ভাঙ্গার কাছে আসতেন। বিয়ের পরপরই তারা পেটরিচ গমন করেন এবং সেখানেই ভাঙ্গার খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পায়। কিছুদিন পর দিমিতার বাধ্যতামূলকভাবে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং কিছু সময় উত্তর গ্রীসে (যা সে সময় বুলগেরিয়ার অধীন ছিল) অতিবাহিত করেন। 

দিমিতার ১৯৪৭ সালে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৬২ সালের ১ল এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ভাঙ্গা ১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। 

বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, টুইন টাওয়ারে হামলা, জলবায়ু পরিবর্তন-এসব বিষয়ে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বুলগেরিয়ার আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন নারী বাবা ভাঙ্গা৷ 

ভাঙা বাবার যেসব ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মিলেছে সেগুলো হলো-

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারের পরিণতির কথা বাবা ভাঙ্গা বলেছিলেন ১৯৮৯ সালে৷ আর জলবায়ু পরিবর্তন ও ২০০৪ সালের সুনামির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন গত শতকের পঞ্চাশের দশকে! যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সেটাও মিলে গেছে৷

২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের উপকূলে বিরাট বিপর্যয় হবে। সে বছর অবশ্য সুনামি হয়েছিল। 

২০১৬ সালে ‘মুসলমানরা’ ইউরোপ দখল করে নেবে৷ কয়েক বছর ধরে ইউরোপে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকবে৷ ফলে লোকজন সব সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে পুরো মহাদেশটি ‘প্রায় খালি’ হয়ে যাবে৷

২০১৮ সালে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুপারপাওয়ারে পরিণত হবে৷

এছাড়া ভাঙা বাবা আরও ভবিষ্যদ্বাণীগুলো হলো-

২০২৩ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে পরিবর্তন আসবে৷

২০২৮ সালে জ্বালানির নতুন উৎসের সন্ধানে মানুষ শুক্রগ্রহে যাবে৷

২০৩৩ সালে পৃথিবীর বরফের একটা বড় অংশ গলে যাবে৷

২০৪৩ সালে ইউরোপে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে৷ আর তার রাজধানী হবে রোম৷ মুসলমানদের শাসনে বিশ্ব অর্থনীতি গতি পাবে৷

২০৪৬ সালে শরীরের প্রতিটি অংশ তৈরি করা যাবে৷ ফলে চিকিৎসার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন৷

২০৬৬ সালে মসজিদে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্ত্র ব্যবহার করবে যেটা হঠাৎ তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে৷
২১০০ সালে কৃত্রিম সূর্য বিশ্বের কিছু অংশের অন্ধকার দূর করে দেবে৷

২১১১ সালে মানুষ জীবন্ত রোবট হয়ে যাবে৷ অথবা বলা যেতে পারে রোবটের অর্ধেকটা হবে মানুষের মতো৷ এই আধা রোবট-আধা মানুষদের বলা হবে ‘সাইবার্গ’ বা ‘সাইবর্স’৷

২১৫৪ সালে এ সময়ের মধ্যে প্রাণীরাও আধা-মানুষে পরিণত হবে৷

২১৭০ সালে বিশ্বে খরা দেখা দেবে৷

২১৯৫ সালে সাগরের পানির নীচে শহর গড়ে উঠবে৷

২১৯৬ সালে এশিয়া ও ইউরোপের মানুষ একসঙ্গে মিলে নতুন এক জাতের মানুষ তৈরি হবে৷

২২০১ সালে সূর্যের আলোর ক্ষমতা কমে আসবে৷ ফলে তাপমাত্রা কমে যাবে৷

২২৮৮ সালে টাইম ট্র্যাভেল সম্ভব হবে৷

২৪৮০ সালে দুটো কৃত্রিম সূর্যের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে৷ পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসবে৷

৩০০৫ সালে মঙ্গলগ্রহে বিশ্বযুদ্ধ হবে৷

ভাঙা বাবা মৃত্যুবরণ করলেও তার ভবিদ্বাণী আজও রয়ে গেছে, যা নিয়ে বিস্ময় আর উদ্বেগের ঝড় ওঠে মানুষের মনে। তিনি ৩০৩৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছেন। যে কারণে আগামী ১ হাজার বছর তিনি হয়তো মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার এই বাণীগুলোর মাধ্যমে।