বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের দ্বিতীয় দিনে জব্বারের বলিখেলা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫১ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার
জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে।
দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে। লোকনাট্য উপভোগ করতে টিকিটি বুকিংয়ের জন্য ভিজিট করুন facebook.com/shilpakalaPage
৪ জানুয়ারি উৎসবের ২য় দিন একাডেমি প্রাঙ্গণে বিকেলে অনুষ্ঠানের শুরুতেই জামাল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘জব্বারের বলিখেলা’। জব্বারের বলিখেলার দলে বর্তমানে ৪২ জন খেলোয়ারের মধ্যে উৎসবে ৬জনের দল অংশগ্রহণ করেছে। দলনেতা জামাল হোসেন, কোচ নূর মোহাম্মদ লেদু এবং খেলোয়ার তরিকুল ইসলাম জীবন, আখতার হোসেন, মো: রুবেল ও আমির হোসেন। আজকের বলিখেলায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন তরিকুল ইসলাম জীবন।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্যায়ে বিকেল ৫টা থেকে নন্দনমঞ্চে জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রথমেই জয়পুরহাট জেলার পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আর একটি নাম মুজিবর এবং কল কল ছল ছল নদী করে টলমল’ গানের কথায় শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে। ২টি সমবেত সঙ্গীত, আমি ভাসাইলিরে এবং যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা’ গানের কথায় নৃত্যশিল্পীদের ২টি সমবেত নৃত্য, গোবিন্দ কর্মকার, কবিরুজ্জামান মন্ডল ও বিমল চন্দ্রের পরিবেশনায় যন্ত্রসঙ্গীত, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী বেবী এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী ইমরান এর পরিবেশনায় একক সঙ্গীত এবং সবশেষে জেলা ব্রান্ডিং এর উপর ভিডিও পরিবেশনা দেখানো হয়।
রাজশাহী জেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত ‘হে বাদামে আগুন কুঞ্জনে লাগালো’; নৃত্যশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য; একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী রফিকুল আলম এবং রাজশাহির পুঠিয়া উপজেলার শিল্পী শিখা রাণী দাস বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে গান করেন, যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী আব্দুর রশিদ, মাহফিজুর রহমান রিবন, লুইস, মিলন ও মনির। নন্দমঞ্চে সবশেষে কুমিল্লা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুমিল্লার প্রযোজনায় তথ্যচিত্র, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী রাসেল দেওয়ান, সঞ্জয় দেব এবং মোস্তফা হরি ভূষণ সূত্রধর এর পরিবেশনায় যন্ত্রসঙ্গীত, জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুমিল্লা’র শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত ‘আব্দুল বারেক সরকারের গীত রচনা ও সুরারোপে ‘ওরে ও বাউল এ মাটিতে জন্মরে তোর এমাটিতে বৃদ্ধি’ হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু এবং এস ডি বর্মনের তাকডুম তাকডুম বাজাই গানের কথায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়।
গত 3 জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার বিকেল 5টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান, এমপি; উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া।
আজকের অনুষ্ঠানের তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত 8টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে অনিুষ্ঠিত হয় আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী আলকাপ: ‘নারী পুরুষ দ্বন্দ’। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আলকাপের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। ধিরে ধিরে এর পরিবেশনা রাজশাহী, নাটোর অতিক্রম করে নঁওগা পযন্ত বিস্তার ঘটেছে। হাস্যরসাত্মক কৌশলে সাধারনত পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৈষম্য বা সমস্যাকে কেন্দ্র করে তা সমাধানের পথনির্দেশ করে আলকাপের বিভিন্ন আখ্যান উপস্থাপন করা হয়। আলকাপের 5টি অংশ আসর বন্দনা, ছড়া, কাপ, বৈঠকী গান ও খেমটা পালা। এভাবেই আলকাপের পালা আখ্যান পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
আলকাপ ‘নারী পুরুষ দ্বন্ধ’ পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেছেন আলাল, মুসলীমা, মনি, লুইস, মিলন, বকুল ও রহিম।
কাহিনী সক্ষেপ: নারী বলে আমি বড়, পুরুষ বলে না। আমি এ সংসারে সকল দায়িত্ব পালন করি আমি বড়। নারী বলে তা হলে তুমি দেখাও কিসে তুমি বড়। এক পর্যায়ে মোড়ল নানার কাছে বিচার দেয়া হয়। মোড়ল নানা বলে তোরা আমাকে বল কে কিভাবে বড়। শুরু হয় ‘নারী পুরুষ দ্বন্ধ’।
আগামীকাল ৫জানুয়ারি ২০২০ বিকেল ৪টা থেকে একাডেমি প্রাঙ্গণ নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত 8টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘কুশান পালা’ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।
২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’
আরকে//