নেতৃত্ব যেন ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়: শেখ হাসিনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৯ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার
আদর্শ আর নীতির সঙ্গেই ছাত্রলীগকে পরিচালিত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ছাত্রলীগের ‘সাংগঠনিক’ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগকে পরিচালিত হতে হবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব যেন ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
শনিবার বিকালে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
আদর্শ ও নীতি ছাড়া কোনোদিন নেতৃত্ব তৈরি হয় না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নীতি ছাড়া কেউ কোনোদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। জাতিকে কিছু দিতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরেছিলেন। কারণ তার মধ্যে নীতি ও আদর্শ ছিল।’
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা হয়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল নানা অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিক থেকে ভাবতে গেলে ছাত্রলীগই মুরুব্বি সংগঠন।’
ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগকে একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে পরিচালিত হতে হবে। এর মাধ্যমেই আগামীতে দেশ পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া যাবে। ছাত্রলীগকে একটি আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের একটি ধারাবাহিকতায় আসে। এ নেতৃত্ব যেন ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
দেশের যে কোনো ক্রান্তি লগ্নে ছাত্রলীগ সবসময় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানিদের একটা প্রবণতা ছিলো আমাদের সবকিছু কেড়ে নেয়ার। তারা শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলতে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই, তারা এরকম ফরমান জারি করেছিলো যে- বাংলা অক্ষর পরিবর্তন করে আরবি হরফে বাংলা ভাষা লিখতে হবে। এর বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম ছিলো তা ছাত্রলীগকে দিয়েই শুরু হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। এর পরে যে সংগ্রাম হয়েছে সেখানে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো।’
তিনি বলেন, ‘১৯৫৮ সালে যখন মার্শাল ল’ দেয়া হলো তখন বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, যেভাবেই হোক এই বাংলাকে মুক্ত করতে হবে, স্বাধীন করতে হবে। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন তখন শুধু রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো তা নয়, তখন তার ঢাকার বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিলো। তখন তিনি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়ে পদক্ষেপ নেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আর সেই লক্ষ্যে তিনি সমগ্র বাংলাদেশে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। প্রত্যেক জেলায় এবং ইউনিয়নে ছোট ২/৩ সদস্য বিশিষ্ট একটা নিউক্লিয়াস গঠন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সমগ্র আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর বঙ্গবন্ধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের নির্দেশনা দিতেন যাতে তা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৬৬ সালে ছয়দফা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশ সফর করেছেন। ছাত্রলীগকে দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন। জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে মানুষের মাঝে চেতনা তৈরি করে জনগণকে সেটা গ্রহণ করানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রলীগকে।
‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পতাকা কেমন হবে তা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলেছিলেন জাপান উদিত সূর্যের দেশ তাই তাদের পতাকা সাদার মাঝে লাল সূর্য। আর আমরা সবুজ বাংলাদেশ তাই আমাদের পতাকা হবে সবুজের মধ্যে লাল সূর্য।’
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর প্রথম প্রতিবাদ ছাত্রলীগের ছেলেরাই করেছিলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নসহ আরো কিছু সংগঠন একসঙ্গে প্রতিবাদ করে। সেই সময় আমরা দুই বোন শরণার্থী হিসেবে বিদেশে ছিলাম। আমাদেরকে দেশে ফিরে আসতে দেয়ার দাবিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হয়। একইসঙ্গে যুবলীগও দাবি করে। আর আওয়ামী লীগ থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী সাহেব সংসদে দাবি করেছিলেন। দেশের যে কোনও ক্রান্তি লগ্নে ছাত্রলীগ সবসময় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।’
বাংলাদেশে একটা সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য ও অবদান সেটা প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর মনে রাখা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সেটা মনে রেখেই ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে তাদের আচরণ, কথাবার্তা ও রাজনীতি সেভাবেই করা উচিত। যাতে এই সংগঠন একটা মর্যাদাপূর্ণ হয় এবং দেশ ও জাতির কাছে আস্থা অর্জন করে চলতে পারে।’
এর আগে তিনি দুপুর আড়াইটার দিকে পায়রা উড়িয়ে, পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সংগঠনের সারাদেশের বর্তমান ও সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জয়-লেখককে ‘ভারমুক্তি’র ঘোষণা দেন তাদের ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ শেখ হাসিনা। ফলে তারা এখন থেকে ছাত্রলীগে পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জ্যেষ্ঠ নেতা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে রবিবার পালিত হবে রক্তদান কর্মসূচি। এরপর শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ হবে।
আরকে//