প্রকাশ পেয়েছে ‘বিশ্বজয়ী বঙ্গবন্ধু’
আজাদুল ইসলাম আদনান
প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিনির্মাণে যে সকল পদক্ষেপ ও ভূমিকা নিয়েছিলেন তা নিয়ে সম্প্রতি প্রখ্যাত লেখক অম্লান দেওয়ানের লেখা বই ‘বিশ্বজয়ী বঙ্গবন্ধু’প্রকাশিত হয়েছে। জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীকে সামনে রেখে শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশ করা হয়।
১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া দেশটির ভৌগলিক অবস্থান, স্বল্প পরিসরে ভূখণ্ড এবং সীমিত অর্থনীতি নিয়ে পথচলা শুরু করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।
একটি স্বার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের প্রথম কাজটি তা হলো প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জাতির জনক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন। প্রমাণ করেছিলেন তার ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক দক্ষতা।
বাংলাদেশ লাভ করেছিল আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ। বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শক্তি সঞ্চয় করেছিল। জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি, পাকিস্তানসহ অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, চীন ও সৌদি আরবের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপনে সবই বাংলাদেশকে রুশ-ভারত প্রভাব এড়িয়ে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে সাহায্য করেছিল।
কিন্তু কিভাবে এটি সম্ভব হয়েছিল? এ নিয়ে আমাদের দেশে খুব কম গবেষণা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো বই নেই বললেই চলে।
এবার জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিনির্মাণে যে সুদৃঢ় পরিকল্পনা, পদক্ষেপ ও ভূমিকা নিয়েছিলেন যা বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়, সে সকল বিষয় নিয়ে বইটি লেখেন অম্লান দেওয়ান।
বইটি সম্পর্কে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী সম্পর্কে অনেক বই লেখা হলেও তার পররাষ্ট্রনীতি তথা বহির্বিশ্বে তার কাজ ও ভূমিকা নিয়ে তেমন কোনো বই লেখা হয়নি।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু বহির্বিশ্বে যে সকল কাজ করেছেন ও তার যে পরিচিতি লেখক অম্লান দেওয়ান অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তা তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু সেসময় কোন কোন দেশ ভ্রমন করেছেন, কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, কোন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন চুক্তি হয়েছিল তা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে লেখকের পরিচিতির কারণে বইটি আমরা ইংরেজি ও ফ্রান্সের ভাষায় প্রকাশ করব। বইটি পড়লেই খুব সহজে বুঝতে পারা যাবে সেসময় বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতিতে কি ধরনের কাজ করেছেন। খুব কম সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ও নিজেকে পরিচিত করার কারণেই বইটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিশ্বজয়ী বঙ্গববন্ধু’।’
লেখক সম্পর্কে প্রকাশক বলেন, ‘অম্লান দেওয়ান দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে আছেন। দৈনিক মানবজমিনে সিনিয়র প্রতিবেদক ও ভোরের কাগজে প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে এক সময় কাজ করেছেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ফ্রান্সের অ্যাম্বাসিতে ট্রেড সেকশনে অ্যাটাসের দায়িত্ব পালন করেন।’
বইটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েই প্রকাশনা অনুষ্ঠান করা হবে। এছাড়া, শ্রাবণ প্রকাশনী কর্তৃক ২০ মাসব্যাপী মেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে লেখক অম্লান দেওয়ান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটির আন্তর্জাতিক পরাক্রমশালী দেশগুলোর স্বীকৃতি আদায় ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সময় স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী চীন থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ১২৪টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে সমর্থ হন। এসব স্বীকৃতি আদায় ছিল বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে।’
তিনি বলেন, ‘এমন সময় তিনি এসব রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি আদায় করেন যখন ছিলনা কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তারপরও তিনি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ভ্রমন করেন। এমনকি পাকিস্তানের থেকে স্বীকৃতি আদায় করেন তিনি। কিন্তু হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও কিভাবে এটি সম্ভব হয়েছিল? তা-ই তুলে ধরেছি বইটিতে।’
লেখক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু খুব কম সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া ও নিজেকে পরিচিত করার কারণেই বইটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিশ্বজয়ী বঙ্গববন্ধু’। দীর্ঘ এক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা করে বইটি লেখার উদ্যোগ নিই। এটাই আমার প্রথম বই।’
অম্লাল দেওয়ান বলেন, বইটি প্রকাশের পর থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। বইটি বিভিন্ন দেশে পৌঁছাতে বাংলা ভাষার পাশপাশি ফরাসী ভাষায়ও প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত সব দূতাবাসে বইটি পৌঁছানোর ইচ্ছা আছে, যাতে করে তারা বুঝতে পারেন বঙ্গবন্ধু কিভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন ও পরিচিত হন।’
একইসঙ্গে বইটি আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। বইটি ইতিমধ্যে শ্রাবণ প্রকাশনীর আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০ মাসব্যাপী বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। আসছে অমর একুশে বইমেলায়ও পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।