ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ধুমপান বন্ধের দিকে যাচ্ছে উন্নত বিশ্ব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:০২ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

সিগারেটের একটা টানে তিন হাজারের অধিক রকম রাসায়নিক পদার্থ ঢুকে যায় ধুমপায়ীর শরীরে। এর প্রধান কারণ হলো নিকোটিন। এই নিকোটিনই ধুমপান ছাড়তে দেয় না। আমাদের দেহে যেসব রোগ হয়, তার অধিকাংশের জন্য দায়ী হলো ধুমপান।

প্রতি বছর বিশ্বে যত লোক মারা যায়, তার দ্বিতীয় প্রধান কারণ ধুমপান। ধারণা করা হচ্ছে, ধুমপানের কারণে বিংশ শতাব্দিতে যে পরিমাণ লোক মারা গেছে, একবিংশ শতাব্দিতে তার ১০ গুণ মারা যাবে।

ধুমপান না করেও পরোক্ষভাবে এর ক্ষতির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ধুমপান না করেও কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, এ লক্ষ্যে প্রকাশ্যে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হয় বহু দেশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৭ সাল থেকে ধুমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে ধুমপান মুক্ত করার অদম্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশে নেওয়া নানা পদক্ষেপের ফলে ধুমপান কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের প্যাকেজিং, দাম বাড়ানো ও প্রচারণার মতো বিষয়গুলোই এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে।

ধুমপানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে বিশ্বের সব দেশ। এজন্য উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে কয়েকশো গুণ। বিশ্বব্যাপী ধুমপান বিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এছাড়া, উন্নত বিশ্বের বড় বড় হোটেল, বিমান বন্দর সিগারেটকে বর্জন করেছে। অতীতে এসব জায়গায় আলাদা ধুমপান কর্নার থকত। কিন্তু ক্রমে এসব কর্নার আর থাকছে না। 

খোলা জায়গা পার্ক, মাঠ, বাস টার্মিনাল, স্টেশন, লঞ্চঘাট, রেস্তোরাঁ, খাওয়ার জায়গা যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানে ধুমপান নিষিদ্ধ।

সংবিধিবদ্ধ সতকীর্করণ ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’- এই চেনা কথাটা কেবল সচেতনতামূলক বাক্য হিসেবে থাকছে না জাপানে। যেমন ধরুণ কোনও ভবনের ভেতরে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। অথচ অহরহই সেখানে এতদিন ধরে ধুমপান করা হয়েছে। কিন্তু এবার জাপান সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক এই আইন পুরোপুরি কাযর্কর হবে দেশটিতে। এপ্রিল থেকে নীতিগতভাবে রেস্টুরেন্ট, বার, অফিস এবং হোটেলে সিগারেট টানা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে শুধু জাপান নয়, বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। উন্নত দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উন্নয়নশীল দেশগুলোও নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে নিয়মিত চলছে ক্যাম্পেইন। নেয়া হচ্ছে আরও নানা উদ্যোগ। বিগত বছরগুলোর মতো বাংলাদেশের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দাম বেড়েছে সব প্রকার সিগারেটের। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ধুমপান বিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এ তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই প্রস্তাবিত মূল্য ঠিক থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

চলতি বাজেটে নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেট সিগারেটের দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭ টাকা হয়। মধ্যম স্তরের ৪৮ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৬৩ টাকা। উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য ৭৫ টাকা থেকে ৯৩ টাকা ও ১০৫ টাকা থেকে ১২৩ টাকা।

দেশে ধুমপায়ীর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে প্রতিবছরই বাজেটে সিগারেটে দাম বাড়ানো হয়। এই মূল্য বৃদ্ধির সুফলও পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু সিগারেটের দাম বৃদ্ধি নয় পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। তাই তামাকমুক্ত দেশ গড়তে বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি এই দাম যেন সঠিকভাবে কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

একে//