ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

বিমান কিনতে সোনালী ব্যাংক  ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চুক্তি

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশিত : ১১:২৪ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার

দেনাগ্রস্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ২০ কিস্তিতে ঋণ দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক।এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এই ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও সোনালী ব্যাংকের আগের ঋণই পরিশোধ করেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের ক্রয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দু’টি ৭৮৯-৯ বিমান , ১ স্পেয়ার ইঞ্জিন এবং ১ টি স্পেয়ার অক্সিলারি  পাওয়ার ইউনিট ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩১৫মিলিয়ান মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৬৭৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।  

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,এ নিয়ে চলতি মাসেই বিমান তৃপক্ষীয় চুক্তি করবে । জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় এই বিমান সংস্থাকে ঋণ দিতে লন্ডনে সোনালী ব্যাংকের সোনালী  ৩১৫ মিলিয়ান ডলার ঋণ দিবে বলো আশ্বস্ত করেছে বিমানকে।  বিমানের  হিসেবে জমা রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক । অর্থাৎ বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্স , অর্থ বিভাগ এবং সোনালী ব্যাংকের মধ্যে ঋণ   চুক্তি হবে । প্রস্তাব বলা হয়েছে ঋণ চুক্তি জন্য  অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্বান্ত হয়েছে । বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে আর্থিক অসঙ্গতি থাকার কারণে নিজে দু’টি বিমান কেনার অবস্থা না থাকার কারণে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে ।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে ,২০২০- ২০২৫ সাল পর্ষন্ত ২০ টি কিস্তিতে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডকে ঋণের অর্থ সরকারের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় অর্থ বিভাগ ঋণ পরিশোধ করবে । অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ঋণের অর্থ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ১০ বছর পর সুদসহ পরিশোধ করবে । উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগ , অর্থ মন্ত্রণালয়, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড এর মধ্যে সম্পাদিতব্য লোন ফ্যাসালিটি এগ্রিমেন্ট এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক ভেটিং করা হয়েছে । পরবর্তীতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড মৌখিকভাবে জানায় যে , অর্থ বিভাগ , অর্থ মন্ত্রণালয় বিমানকে লোন ফ্যাসেলিটি এগ্রিমেন্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর ঋণ পরিশোধ করবে , সেহেতু অর্থ বিভাগ , অর্থ মন্ত্রণালয় , সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এবং বিমান সেখান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আগের ঋণ সমন্বয় করে প্রায় ২০ কোটি ডলারের মতো নতুন ঋণ সৃষ্টি করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব কাজ গুছিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।এর আগে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটিকে দুটি নতুন উড়োজাহাজ কিনতে ২০১৩ সালে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার লক্ষ্যে একটি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ বিমান। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছয়টি উড়োজাহাজ কেনে বাংলাদেশ বিমান। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে আরও চারটি বিমান যুক্ত হবে বিমানের উড়োজাহাজ বহরে।

বর্তমান বাজারদরে এক ডলার ৮৪ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ২৫ কোটি ডলারে বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা আমানত রাখা হবে সোনালী ব্যাংক ইউকেতে।

সদ্যবিদায়ী বছরে হজের মৌসুমে দুই মাস মুনাফা করলেও বাকি ১০ মাস লোকসান দিয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ২০১৮ সালে ২০১ কোটি টাকা লোকসান ছিল বিমানের। 

জানা গেছে, ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ করে বিমান। ওই ঋণ এখন বেড়ে ৪১৯ কোটি টাকা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ডিসি-১০ কেনার ঋণের ২২২ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছ। এছাড়া গত ১০ বছরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বিমান। এখনও ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া আছে। ফ্লাইট পরিচালনা বাবদ বিমানের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাওনা প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল পাবে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বকেয়া কর, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানি ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিল বাবদ সরকারের কাছে বিমানের দেনা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরও দুটি ড্রিমলাইনার কিনছে বিমান। এ নিয়ে বিমানের বহরে ড্রিমালাইনারের সংখ্যা দাঁড়াবে চারে।

আরকে//