ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২০ ১৪৩১

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হলো যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:৪৯ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পা রাখেন বাঙালি জাতির অভিভাবক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে কেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। 

ঐতিহাসিক স্থানে সেই সময়টিতেই এবার জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হলো। 

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান থেকে ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি জন্মশতবার্ষিকীর লোগো উন্মোচন করেন। ঘড়ি চালুর মধ্যদিয়ে শুরু হয় মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা। 

১৯৭২ সালের এই দিনে বিশেষ বিমান থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে জনতার উচ্ছ্বাস আর তাদের ‘শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত ছিল তেজগাঁও বিমানবন্দর। তেজগাঁওয়ে এখন আর বিমানবন্দর নেই। কিন্তু আজও সেখানে ছিল ‘শেখ মুজিব’ ‘শেখ মুজিব’ বলে গগনবিদারী স্লোগান।

সবকিছু ছিল সাজানো-গোছানো। লেজারের প্রতিচ্ছবিতে বঙ্গবন্ধুও সেখানে ‘উপস্থিত’ ছিলেন। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা, বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দর্শকরা। হাজারো জনতার সামনেই এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা এবং লোগো উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে। মূল পর্ব শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর। অনুষ্ঠানস্থলে একটি প্রতীকী বিমান অবরতণ করে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমান এখানেই অবতরণ করেছিল। সে জন্যই প্রতীকী বিমান অবতরণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়।

৪৮ বছর আগে বিমান থেকে নামার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে বরণ করা হয়েছিল ঠিক একই কায়দায় প্রতীকী গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এছাড়া বিমান থেকে আলোক প্রক্ষেপণ এবং তোপধ্বনিও দেয়া হয়।

এ সময় বিমানের প্রবেশপথের পাশেই লেজার রশ্মি দিয়ে তৈরি করা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। উচ্ছ্বসিত জনতা বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এই প্রতিকৃতিই একটি আলোর প্রতিচ্ছবি হয়ে লালগালিচা বিছানো পথ ধরে মঞ্চে পৌঁছায়। সেই মঞ্চে এসেই ল্যাপটপে ক্লিক করে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের কাউন্টডাউন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে নিজেই ধরেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। তার সঙ্গে গলা মেলান বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং উপস্থিত দর্শকরা। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উড়তে থাকে পায়রা এবং রঙিন বেলুন।

ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দেশবরেণ্য ব্যক্তিরাও। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন প্রফেসর এমিরেটাস রফিকুল ইসলাম ও ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন- স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, কবি নির্মলেন্দু গুণ, শিল্পী হাশেম খান, অভিনয় শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

ক্ষণগণনার জন্য দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি স্থানে এবং প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলায় ঘড়ি বসানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার ৮০টির বেশি স্থানে ক্ষণগণনার ঘড়ি বসানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি দেশে সারা বছর যেসব অনুষ্ঠান হবে, তাতে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, যেখানেই বাংলাদেশের মিশন আছে, সেখানে আমরা মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপন করব। মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের নতুন ব্র্যান্ডিং করতে চাই। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে একটি সম্ভাবনার দেশ হিসেবে তুলে ধরতে চাই। বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ।

এছাড়া বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ প্রকাশ ও প্রচার, বঙ্গবন্ধুর বিদেশ সফরের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং সমুদ্র বিজয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬১টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এআই/