সাত দশক পর মোংলা বন্দরে আউটারবারে ড্রেজিং শুরু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার
সক্ষমতা বৃদ্ধি আর ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দূর করতে সৃষ্টির সাত দশক পর অবশেষে মোংলা বন্দরের আউটারবারে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। এতে বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্খা পূরণসহ ভোগান্তিরও দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে এ বন্দরের আউটারবারে আর কখনো ড্রেজিং হয়নি। যে কারণে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভেড়াতে নানা বিড়াম্বনার শিকার হতে হত ব্যবসায়ীদের। অনেকে পণ্য খালাসে অনীহা দেখাতো বলে এ বন্দরে জাহাজই ভিড়াতো না। মোংলা বন্দর ব্যবহারের সংঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বন্দরের (মূল প্রবেশমুখে) আউটারবারে শুরু হওয়া ড্রেজিং কার্যক্রম দেখতে শনিবার (১১ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় তার সাথে ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ভোলা নাথ দে, যুগ্নপ্রধান রফিক আহম্মদ সিদ্দিক, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক সহ বন্দরের পদস্থ কর্মকর্তারা।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এসময় সাংবাদিকদের জানান, আঞ্চলিক দেশ সমুহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আমাদনী-রপ্তানী বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চায় সরকার। তাই মোংলা সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমাদনী-রপ্তানি বৃদ্ধিরসহ এ বন্দরের গতি বাড়াতে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
চলমান এ গতি ধরে রাখতে প্রথমবারের মতো আউটারবার ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। আর এ ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি মোংলা বন্দরে ভেড়তে পারবে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শওকত আলী জানান, হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি চীনা কোম্পানী মোংলা বন্দরের প্রবেশমুখে (আউটারবার) এ্যাংকারেজ পর্যন্ত ড্রেজিং কাজ করছে। এ ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে চার গুণ। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর একনেকে এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দরপত্রে কাজ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ডাইক নির্মাণসহ খনন কাজ শুরু করে। কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে যাওয়ায় পরে এ ড্রেজিং কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে এ কাজ আবার শুরু করা হয়। এ কাজে কাটার ও হোপার সাকশন ড্রেজার ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাটার সাকশান ড্রেজার দিয়ে পাঁচ লক্ষ ঘনফুট ট্রেইলিং হোপার সাকশান ড্রেজার দিয়ে ২০ লক্ষ ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে। যা মোট কাজের ২৪ দশমিক বলেও জানান তিনি।
এরপরে চুক্তিকৃত ১০৩ কোটি ৯৫ লক্ষ ঘনমিটার মাটি পর্যায়ক্রমে খনন করা হবে জানান প্রধান প্রকৌশলী শওকত আলী।
এ প্রকল্পের পরিচালক মো. বজলুর রহমান জানান, ১৯৫০ সালে বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পর এই প্রথম বন্দর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং কাজ শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি মোতাবেক ৭১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ের এই প্রকল্পটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক জানান, মোংলা বন্দরের কার্যক্রম ও সক্ষমতা চার গুণ বাড়াতে ‘হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লি.ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করর্পোরেশন’যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রেজার মেশিন ‘সিং হাই ট্যাং’ দিয়ে পশুর চ্যানেলের আউটার ড্রেজিং শুরু করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোশিয়েসনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পশুর নদীর মোহনায় হিরোন পয়েন্ট ১০ নম্বর বয়া থেকে গভীর সমুদ্রের ৫ নম্বর এলাকার হংষরাজ বয়া পর্যন্ত মোট ১১ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা কম থাকায় দীর্ঘদিন আমদানী-রপ্তানীকারকদের ভোগান্তি চলছিলো। সদ্য শুরু হওয়া ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ হলে তাদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য বাড়বে বলেও তিনি জানান।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলমান ডেজিং প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি তিন লাখ ৯৫ হাজার ঘন মিটার মাটি খনন করা হবে। এরপর ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট পণ্য বোঝাই করে যে কোন জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতে পারবে।
কেআই/