ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর আহ্বান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০১ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সভাপতি শামস মাহমুদের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ গভর্নর কার্যালয়ে এ সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ৮% হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও কাঙ্খিত মাত্রায় বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না, উপরন্তু বেসরকারীখাতে ঋণ প্রবাহের হার নিন্মমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচেছ, যেটি ২০১৯ সালের নভেম্বরে ছিল ৯.৮৭%, এজন্য ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার অন্যতম প্রধান কারণ বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বেসরকারিখাতের বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটানোর জন্য ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান এবং সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য তফসিল ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১ এপ্রিল হতে এটি কার্যকর করার জন্য সকলের সমন্বিত উদ্যোগের উপর জোরারোপ করেন। 

খেলাপী ঋণ কমাতে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপী চিহ্নিতকরণে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বের করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংষ্কার, বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২’-এর ৪২(সি) এবং ৪৬(৩)-এর ধারা সংশোধনের আহ্বান জানান। এসএমই খাত কে দেশীয় শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখাতের উদ্যোক্তাদের রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। 

ডিসিসিআই সভাপতি ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর সরকারের ঋণ গ্রহণের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পে বিকল্প উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারে বন্ড প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। তিনি আরোও বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়নের চেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী খাতসমূহের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদল কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশিরভাগ ব্যাংক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। অর্থনীতি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সকল জনগনের অবস্থার উন্নয়নে সরকার সিঙ্গেল ডিজিট হারে ঋণ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আগামী ১ এপ্রিল হতে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দেশের ব্যবসায়ী সমাজ এ সুযোগ গ্রহণ করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে। 

খেলাপী ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ইচ্ছাকৃত ও অনিচছাকৃত ঋণ খেলাপী চিহ্নিতকরণে আইনে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে, তবে কোন উদ্যোক্তা যদি বিদ্যুৎ, জ্বালানী, গ্যাস সংযোগ অথবা ব্যাংক ঋণ প্রভৃতি সেবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পেয়ে যদি কোন উদ্যোক্তা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হন, সেটি বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সত্যিকারের ঋণ খেলাপী চিহ্নিতকরণে ব্যাংকসমূহের যত্নবান হওয়া আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন। 

বন্ড মার্কেট বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্ট্যাম্প ডিউটির প্রত্যাহার করেছে, যা বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং দেশে একটি সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট চালু একান্ত জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ‘রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড (ইডিএফ)’- এর যথাযথ ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম এ্যাডভাইজর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং ইকোসিস্টেম, সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশে ব্যাংক প্রতিনিয়ত নীতি সহায়তা প্রদান করছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।   

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক আন্দালিব হাসান, আরমান হক, নূহের লতিফ খান এবং ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। 

আরকে//