চীন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ: কি পরিবর্তন আনলো
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:০৫ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
তীব্র বাক্যবাণে পরস্পরকে জর্জরিত করা, তীব্র উত্তেজনা কিংবা 'যুদ্ধবিরতি'র সুর -এসব কিছুই দেখা গেছে চীন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধকে কেন্দ্র করে। আর এখন তারাই শেষ পর্যন্ত একটি বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। (১৫ই জানুয়ারি হওয়ার কথা)
ফল যাই হোক, এই বাণিজ্য যুদ্ধ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক এমনকি বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রকৃতির নতুন রূপ দিয়েছে।
কিন্তু এই দু'বছরের বাণিজ্য আলোচনা, যা ছিলো দেশ দুটির জন্য রোলার কোস্টারের মতো।
এই সময়ে কি কি পরিবর্তন এসেছে?
বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কোর কার্ড হিসেবে দেখেছেন বাণিজ্য ঘাটতিকে এবং তিনি বিশ্বাস করেন শুল্ক যুদ্ধ চীনের সাথে তার দেশে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারে।
হ্যাঁ তাই হয়েছে।
বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমেছে যদিও এখনও তা অনেক বেশি আছে।
গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আগের বছরের চেয়ে ঘাটতি কমেছে প্রায় ছয় হাজার কোটি ডলার এবং এখন এ ঘাটতির পরিমাণ ছত্রিশ হাজার কোটি ডলার।
তবে এ ঘাটতির কমানোর মূল্য স্বরূপ দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমেছে প্রায় দশ হাজার কোটি ডলারের।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে
ট্রাম্পের শুল্ক আর মার্কিন কৃষকদের বড় ধাক্কাই দিয়েছে চীন।
কারণ চীনে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিজাত রপ্তানি আড়াই হাজা কোটি ডলার থেকে কমে এখন সাতশ কোটি ডলারের নীচে। এটাই সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কম।
কিন্তু চীনের কৃষি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় সমস্যা তৈরি করেছে কিনা তা নিশ্চিত না।
কারণ দেশটিতে কৃষকের সংখ্যা খুব বেশি নয় আবার সরকার ক্ষতি নিরসনে কৃষিখাতে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
হ্রাস পেয়েছে চীনা বিনিয়োগ
যদিও চীনে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ অনেকটাই স্থিতিশীল ছিলো এই বাণিজ্য যুদ্ধের সময়েও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগ কমেছে ব্যাপকভাবে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট এর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ ২০১৬ সালে ছিলো পাঁচ হাজার চারশ কোটি ডলার আর ২০১৮ সালে এটি হয়েছে নয়শ সাত কোটি ডলার।
আর ২০১৯ সালের প্রথম অর্ধেকে এটা ছিলো মাত্র আড়াইশ কোটি ডলার।
চীনা কোম্পানিগুলো বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনাকে নিয়ে তৈরি হওযা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বিনিয়োগে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।
এছাড়া বিনিয়োগকে কঠোর নিরীক্ষার আওতায় আনার যুক্তরাষ্ট্রর নীতি ও চীনের মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ শক্ত করাও ছিলো এর উল্লেখযোগ্য কারণ।
ধূসর বাণিজ্য পরিবেশ
যদিও বিনিয়োগ এখনো হচ্ছে কিন্তু আমেরিকান যেসব কোম্পানি চীনে কাজ করছে তারা বলছে দু দেশের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা তাদের বেশি উদ্বেগের কারণ।
ইউএস চায়না বিজনেস কাউন্সিলের হিসেবে চীনে যেসব আমেরিকান উদ্যোক্তা কাজ করছে তাদের মধ্যে ৮১% মনে করেন বাণিজ্য যুদ্ধ তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অথচ ২০১৭ সালে মাত্র ৪৫ শতাংশ আমেরিকান কোম্পানির এ ধরণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ ছিলো।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা
যুক্তরাষ্ট্রের আশংকা তাদের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে তিন শতাংশ কম হবে এবং এর একটি বড় কারণ বাণিজ্য যুদ্ধ।
বিশ্লেষকরা বলছেন এর পুরো প্রভাব বুঝতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।
চীনের প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী।
২০২০ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ কমতে পারে বলে বলছে বিশ্বব্যাংক। তিন দশকের মধ্যে এটাই হবে সবচেয়ে কম।
আবার দুটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যকার এ লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিও।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জিওরগিয়েভা বলেছেন, "এই যুদ্ধে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে'।
তবে চীন ছাড়াও অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের সাথেও বাণিজ্য চুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসব বাণিজ্য দ্বন্দ্বের কারণে আইএমএফ বলছে ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা তিন শতাংশ কমিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্মণ
একটি বাণিজ্য চুক্তি সত্ত্বেও বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার প্রযুক্তিগত বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বাড়ছে।
চীনা টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ে ও আরও কিছু কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের সাথে ব্যবসা করতে পারছেনা।
আবার বেইজিংও একই ধরণের কালো তালিকা করেছে।
মনে করা হচ্ছে আমেরিকায় থাকা চীনা কোম্পানিগুলোকে পর্যবেক্ষণের আওতাতেই রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।
জিও-টেকনোলজিক্যাল বিশেষজ্ঞ পল টিওলো বলেছেন প্রথম দফার বাণিজ্য চুক্তি দু দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখবে কিন্তু এটা দুদেশের প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্ব ও অনাস্থা কতটুকু কমাবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
সূত্র: বিবিসি