আমরণ অনশনে অসুস্থ ৯ শিক্ষার্থী, ভিসির সংহতি
ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৯:৪৪ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
সরস্বতী পূজার কারণে আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশনে সংহতি প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) উৎপল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) কাজল দাস, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তী, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অর্ক সাহা, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবুজ কুমার, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জয়ন্ত বণিক, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের সুকেশ দেবনাথ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রবিউল আওয়াল রবি ও সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ভবতোষ চন্দ্র রায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশনে সংহতি প্রকাশ করে উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের তারিখ-দিনক্ষণ ঠিক করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ৩০ তারিখ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করার আগে তাদের ভাবা উচিত ছিল যে, এই তারিখ নির্ধারণ কোনো মূল্যবোধ বা কোনো চেতনার পরিপন্থী হয় কি-না। কেননা সরস্বতী পূজা এমন একটি ধর্মীয় উৎসব, যেখানে অসাম্প্রদায়িক আবেদন রয়েছে। আবহমান কাল থেকে এই ধর্মীয় অনুভূতি একটি অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ পবিত্র সরস্বতী পূজায় অংশ নিয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর আবেদন আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়।
উপাচার্য আরও বলেন, আমি মনে করি যদি আইন-আদালতের কোনো ঝামেলা না থাকে, তাহলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি বিবেচনা করে আর কালবিলম্ব না করে নির্বাচন কমিশনের এই তারিখটি পরিবর্তন করা উচিত।
এছাড়াও আমরণ অনশনে একাত্মতা পোষণ করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড.সাদেকা হালিম, জগ্ননাথ হলের প্রভোস্ট ড.মিহির লাল সাহা ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল।
নিয়মিত কর্মসূচি হিসাবে আজও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে জাগো হিন্দু পরিষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর অাড়াইটা থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই আমরণ অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল সংসদ শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) উৎপল বিশ্বাস বলেন, ৩০ জানুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা পালনের দিন। একই দিনে নির্বাচন কমিশন দুই সিটির ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে। ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আমরা গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এর মধ্যে শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলনও করেছি। বুধবার নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রাও করেছিলাম। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে পুলিশ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা আটকে দেয়।
‘নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচী পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সবার একটাই দাবি ভোটের তারিখ পরিবর্তন করা হোক।’ যোগ করেন উৎপল বিশ্বাস।
উৎপল বিশ্বাস আরও বলেন, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। দেখা যাক কি হয়। এছাড়া দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’
জগন্নাথ হল সংসদ শাখার সাধারণ সম্পাদক (জিএস) কাজল দাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। আমরাও আছি অনশনে। নির্বাচন কমিশন অফিসিয়ালি জানিয়েছে, তাদের পক্ষে নির্বাচন পেছানো সম্ভব নয়। তারপরও আমরা নির্বাচন কমিশনকেই জানাতে চাই, একই দিনে ভোট আর পূজা হতে পারে না। তাই সকল দিক বিবেচনায় ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তন করা হোক।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের তারিখ পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।
আরকে//