বাণিজ্য মেলায় অফারের নামে প্রতারণা (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১১:৩২ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার
‘যে কোনো পণ্য কিনলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়! আবার একটি পণ্য কিনলে ১০টি, কোথাও ২০টি পণ্য ফ্রি! পণ্য ভেদে দেওয়া হবে ৫ থেকে ৮ বছরের ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি অথবা রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি ।’
এমন বিভিন্ন লোভনিয় অফার দিয়ে পণ্য বিক্রির জাল পেতেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার কিছু প্রতারক চক্র। বিক্রি বাড়াতে অফারের নামে তারা ক্রেতাদের সঙ্গে করছেন প্রতারণা। আর অসচেতন ক্রেতারাও না বুঝে এসব পণ্যের দিকে ঝুকছেন। কেউ কেউ পণ্যগুলো কিনে হচ্ছেন প্রতারিত।
বেশ কয়েকদিন মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু স্টল মালিক ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের অফার দিচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন ইলেকট্রিক ওভেন এর সঙ্গে বিশেষ অফার, কেউ টিভি, ওয়াশিং মেশিন অথবা ইলেকট্রিক চুলার সঙ্গে। তবে প্রতিটি অফারের আড়ালে রয়েছে কৌশলী প্রতারণা।
এরশাদুল ইসলাম অপু। থাকেন মোহাম্মদপুরে। মেলার ১৫তম দিনে বাসার প্রয়োজনীয় কিছু কোকারিজ পণ্য কিনতে স্ত্রীসহ বাণিজ্য মেলায় এসেছিলেন। দুজনই অনেকক্ষণ বিভিন্ন দোকানে দাম দর যাচাই করেন। সব শেষে তারা একটি কোকারিজ পণ্যের স্টলে যান। বিক্রেতারা তাদেরকে বিভিন্ন কোকারিজ পণ্য দেখান। পরবর্তীতে একটা ওভেন দেখেন, যেটার মূল্য দেওয়া আছে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। মিয়াকো কোম্পানির লোগ লাগানো এই ওভেনটি কিনলে আরও ১০টা পণ্য এর সঙ্গে ফ্রি দেওয়া হবে। অথবা ১০টি পণ্যের মধ্যে যেকোনো দুইটি পণ্যের পরিবর্তে একটি এলইডি টেলিভশন দেওয়া হবে।
মিয়াকোর মতো ইন্টারন্যাশলনাল কোম্পানির এতগুলো জিনিস ফ্রি দেওয়ার অফার দেখে এরশাদুল অপুর স্ত্রী বিচলিত হয়ে ওঠেন। এটা কি করে সম্ভব! বিক্রেতারা তাদের আশ্বস্ত করেন এটা মিয়াকোরই পণ্য।
তারা আরও জানায়, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় প্রচার করলে বিজ্ঞাপনের জন্য অনেক অর্থ খরচ হতো। ক্রেতারা যদি পণ্যটি সরাসরি স্টেল থেকে কিনে নেন তবে প্রচারের টাকাটাই তারা ফ্রি দেন। মজার বিষয় হচ্ছে- এসব পণ্যের সঙ্গে এক থেকে ৮ বছরের ওয়ারেন্টিও দেওয়া হবে বলে জানানো হচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে প্রতিষ্ঠানটি রিপ্লেসমেন্টের সুবিধাও দেওয়ার অফার দেয়। একপর্যায়ে ওই দম্পত্তি একটি অফার নিয়ে নেন। পণ্যের সঙ্গে ওয়ারেন্টি কার্ড ও হোম ডেলিভারীও দেন প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু পণ্যগুলো বুঝে পাবার পর তাদের মনে পণ্যের মান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপরের দিন তারা মেলার বাইরে বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে পণ্যগুলোর দাম ও মান নিয়ে যাচাই শুরু করেন। ঠিক সে সময়ই জানতে পারেন যে, তাদের সঙ্গে প্রতারণরা করা হয়েছে।
ঝাচাই বাছাই করে দেখা যায়, যে ওভেনটা দেওয়া হয়েছে সেটির দাম বাজারে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। সেটির দাম তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর ওই স্টলে গিয়ে তারা যোগাযোগ করেলে তাদের সঙ্গে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। আর এমন দৃশ্য মেলা প্রাঙ্গনে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে কয়েকদিন ধরে বাণিজ্য মেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এরকম প্রতারক চক্রদের প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে। অধিকাংশ স্টেলে অভিযান চালিয়ে এসব জালিয়াতি চক্রকে সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও করেছেন।
কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য মেলায় অসংখ্য অসাধু প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করার জন্য ফাঁদ পেতে বসে আছেন। ক্রেতাদের এসব ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। তাদেরকে সচেতন হতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘১ জানুয়ারি মেলা শুরুর পর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতার পাশাপাশি সক্রিয় কার্যক্রম চালাচ্ছে অধিদপ্তর। কোনো গ্রাহক এসে অভিযোগ করলেই তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার অভিযোগ প্রমাণ হলে পুরস্কার পাচ্ছেন অভিযোগকারীরা।’
এসএ/