ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিশ্বের অন্যতম ‘ক্যারিশম্যাটিক ডিপ্লোমেট’ ছিলেন বঙ্গবন্ধু 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১০:৫২ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার

দেশ স্বাধীন করতে গোপন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন বিদেশে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন দেশের পরিচয়। কূটনৈতিক ক্ষেত্রের সেই সফলতার হাত ধরেই স্বাধীনতা লাভের পর বহু রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বের বাঘা বাঘা সরকারপ্রধান বা কূটনৈতিক ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ হতে পারেননি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কিংবা তৃতীয় বিশ্বের একজন নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে কখনো মাথা নিচু করে আলাপ করতে দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর মুখের অভিব্যক্তি ছিল সবার থেকে আলাদা। বঙ্গবন্ধুর এসব গুণ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম একটি কারণ। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই কূটনৈতিক বৈশিষ্ট্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এজন্য বঙ্গবন্ধুকে বিবেচনা করা হতো বিশ্বের অন্যতম ‘ক্যারিশম্যাটিক ডিপ্লোমেট’ হিসেবে।

স্বাধীনতাপ্রত্যাশী বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তানের পরিচয়ের চেয়ে বেশি কাজ করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। এমনকি একটি দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিসার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো বঙ্গবন্ধুর পরিচয়কে। বঙ্গবন্ধুর এরকম অসংখ্য কূটনৈতিক অর্জনের কথা বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে তৎকালীন কূটনীতিকদের কথায়।  

সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেছিলেন, ‘একাত্তরে রিফিউজি হয়ে যখন জার্মানিতে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতাম অন্য দেশে যাওয়ার সময় আমাদের কার্ড দেখে বলতো তোমরা শেখ মুজিবের দেশের লোক, তোমাদের কোন ভিসা লাগবে না।’

সাবেক কূটনীতিক এনাম আহমেদ চৌধুরী বললেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যই ছিল অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা আর বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায় করা।’

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে হাজারো সংকট আর টানাপোড়েনের ভেতর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন, বঙ্গবন্ধুর অনন্য
কূটনৈতিক সাফল্য। তাঁর ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে সেটা চির অমলিন স্মৃতি। বিশ্বমানের নেতা হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সম্মান-সমাদর ছিল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

বিশ্বের বড় রাজনীতিবিদই ছিলেন না, বিশ্বমানের কূটনীতিকও ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশে কিংবা বিদেশে, যখনই কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, দেশের স্বার্থের বিষয়ে তাদের সমর্থন আদায় করে নিতে কখনই ভুলতে না। বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক কৌশল দিয়ে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিরোধীদেরও সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

মাত্র ৪৪ মাস দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ যে ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল তার অন্যতম কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চমক। কূটনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের যে কোন সরকারপ্রধান অপেক্ষা বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম।

মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক দক্ষতায় বাংলাদেশে ৫০টির মতো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সফরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক সফর অনুষ্ঠিত হয়। ওই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার নানা বিষয়ে ৭০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক,
অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি, আইডিএ, ইউএনএইচসিআর প্রভৃতি বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলারের  ঋণ, সাহায্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করে।

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শন ছিল- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এবং ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান’। এই আদর্শেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা সেই আদর্শকেই ধারণ করে আজও আবর্তিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশটি ক্ষুদ্র, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, আমরা চাই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’। বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই আজকের বাংলাদেশ বিশ্ব সমাজের সঙ্গে দৃঢ়তর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই বাংলাদেশের রয়েছে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক।

এএইচ/