ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

হলফনামায় সম্পদ গোপনের অভিযোগ তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার

প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই এবার নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনী হলফনামায় সিঙ্গাপুরে থাকা মিলিয়ন ডলারের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এই প্রার্থী। সুইডেনভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়।

ওই গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিঙ্গাপুরে ২০০৮ সালে যৌথ মালিকানায় নিবন্ধিত এনএফএম এনার্জি কোম্পানির এক হাজারটি শেয়ারের মধ্যে ৩৪০ শেয়ারের মালিক তাবিথ আউয়াল। এছাড়া বাকি ৬৬০ শেয়ারের মালিক তাবিথ আউয়ালের দুই ভাই তাসফির আউয়াল এবং তাজওয়ার আউয়াল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাবিথ আউয়াল এবং তার ভাইয়েরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পরিচয়ে ওই কোম্পানিতে নিবন্ধন করেন। কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সিঙ্গাপুরের আরেকজন নাগরিক। কিন্তু তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী হলফনামায় তার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন যে ৩৭টি কোম্পানির তালিকা দিয়েছেন সেখানে বিপিসিএল ও এনএফএম এর নাম নেই।

সিঙ্গাপুরের একাউন্টিং এবং করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (এসিআরএ) জানায়, প্রাথমিক পণ্য উৎপাদন এবং খাবার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এনএফএম এনার্জি। এ ছাড়া বিভিন্ন জ্বালানী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতেও তারা বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের একটি বড় অংশের মালিক এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানিটির সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক বিবরনী থেকে জানা যায়, কোম্পানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৭ ডলার।

এনএফএম এনার্জি কোম্পানিটি বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বিপিসিএল) এর একটি বড় অংশের মালিক কিন্তু তাবিথ আউয়াল তার কোম্পানিটির নাম নির্বাচনী হলফনামায় অন্তর্ভুক্ত করেননি, যা বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন ও বিধির লঙ্ঘন।

এদিকে, পানামার ব্যবসা নিবন্ধক সংস্থার নথি এবং প্যারাডাইস পেপার্সে মাল্টিমোড ইন্টারন্যাশনাল নামের আরেকটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। যে কোম্পানিটির ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) ও ডিরেক্টর হিসেবে তাবিথ আউয়ালের নাম রয়েছে। মাল্টিমোড ইন্টারন্যাশনাল এসএ নামক এই কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাবিথের বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টু।

এসব কোম্পানির বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমার সব নথিপত্র আমার আইনজীবীরা তৈরি করেছেন। তারা আইন এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝেই নথিপত্র তৈরি করেছেন। এছাড়া এনএফএম বাংলাদেশের পেট্রোকেমিক্যালের অংশীদার এটিও স্বীকার করে নিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। তিনি আরও জানান, এনএফএম এনার্জি ছাড়া আর কোনও বিদেশি কোম্পানিতে তার কোনও শেয়ার নেই। এদিকে পানামা পেপার্সের নামের বিষয়ে তাবিথ বলেন, আমার এই সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। আমার নাম কি সেখানে আছে?

এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সে প্রথমবারের মতো বিষয়গুলো শুনছেন এবং বিস্তারিত না জেনে তিনি মন্তব্য করবেন না।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের অংশ নেয়া সব প্রার্থীদের দেশের ভেতর এবং বাহিরের সব সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে।

এর আগে প্যারাডাইজ পেপারে তাবিথ আউয়ালের নাম আসা প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এই প্রার্থীর সম্পদের হিসেবে যাচাই করার অনুরোধ জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তারা জানান, নির্বাচনের প্রার্থী যেই হোক, সে যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান থেকে খবর নেওয়া উচিত।

একে//